শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

খেতের আইলে সবজি চাষ, আশা জাগিয়েছে উপকূলে

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খেতের আইলে সবজি চাষ, আশা জাগিয়েছে উপকূলে

খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ঘেরের আইলে (বাঁধের ওপর) ‘বিষমুক্ত সবজি চাষ’ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ধান ও মাছের পাশাপাশি ঘেরে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন এখানকার কয়েক হাজার কৃষক। জানা যায়, আইলে বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁশ ও নেট দিয়ে ঝুলন্ত মাচা তৈরি করা হয়। তারপর বিষমুক্ত সবজির আবাদ করে বাড়ন্ত গাছ মাচার ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে জায়গা কম লাগে ও অল্প পরিচর্যায় ভালো ফসল পাওয়া যায়। মৌসুমী  ধান ও মাছ চাষ করে একসময় যাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটত, লাভজনক সমন্বিত সবজি চাষে এখন তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। ‘অল্প পুঁজিতে অনেক লাভ’— ফলে উৎসাহিত হয়ে এখন সমন্বিত এই চাষের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। সরেজমিন খুলনার রূপসা উপজেলার ঘুপিয়ার বিল, জাবুসা ও খাজুরার বিলে দেখা যায়, যতদূর চোখ যায় সবুজের হাতছানি। ঘেরের আইলে সারি সারি মাচায় ঝুলছে করলা, ঢেঁড়শ, পুঁইশাক, কুমড়া আর শসা। বর্ষাকালীন সবজির পাশাপাশি আগাম শীতকালীন সবজি চাষও শুরু করেছেন অনেকে। বিশেষ জাতের শিম ও ধুন্দুলের হলুদ ফুলে চোখ জুড়িয়ে যায়। রূপসা উপজেলার ঘুপিয়ার বিলের কৃষক বাবুল শেখ জানান, প্রায় সারা বছরই আইলে সবজি চাষ হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে শসা, শিম, ধুন্দুল, করলার বীজ বপন করলে ৪৫ দিনের মধ্যেই ফল আসে। এরপর আশ্বিন মাসে টমেটো, লাউসহ শীতকালীন সবজির চাষ করা হয়। কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বলে বাজারে এসব সবজির চাহিদাও অনেক বেশি। খুলনা বিভাগীয় কৃষি কর্মকর্তা আল লতিফ জানান, কৃষকদের বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এজন্য কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত উঠান বৈঠক ও সবজির খেতে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ ও পোকা দমনে আলোর ফাঁদসহ বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নিজেদের উদ্যোগে বিষমুক্ত সবজি বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করেছে। রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রবিউল ইসলাম বলেন, বিষমুক্ত সবজি চাষে উৎসাহিত করার পাশাপাশি এর সহজ বিপণন ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত পরিবেশে আইলে সবজি চাষ সম্ভাবনা জাগিয়েছে। কৃষি জমি ধীরে ধীরে কমে যাওয়ায় শাক-সবজি উৎপাদনের বিকল্প কৌশল নিয়ে এখনই ভাবতে হচ্ছে। পারিবারিক পৃথিকীকরণের কারণে প্রতি বছর চাষের জমি ভাগ হচ্ছে এবং জমির মাঝখানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন আইল। এতে দিন দিন আইলের পরিমাণ বাড়ছে। এসব কারণে অব্যবহূত আইলসমূহ সবজি চাষের আওতায় আনা গেলে বেকারত্ব মোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর