শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে গণধর্ষণ

সাত মাসে শিকার ১১৯ জন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মাজারে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে বেড়ান এক বাউলশিল্পী। মাসখানেক আগে তার সঙ্গে পরিচয় হয় আরেক নারী শিল্পীর। এই সূত্রে বুধবার রাতে সাভারের আশুলিয়ার আউকপাড়ায় একটি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার ডাক পান তিনি। ওই দিন সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ থেকে আশুলিয়ায় আসেন ওই শিল্পী। পূর্বপরিচিত শিল্পীর দেওয়া ঠিকানায় যাওয়ার পর তাকে একটি ঘরে আটকে রেখে কয়েকজন ধর্ষণ করেন। এটা শুধু একটা ঘটনা নয়, প্রতিদিনই ঘটে চলেছে এরকম ঘটনা। গত বুধবার রাজধানীর উত্তরখানে এক কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। রাত ৮টার দিকে ওই কিশোরী কালীগঞ্জ বোনের বাড়ি থেকে উত্তরখানের নিজ বাসায় ফিরছিলেন। তখন তার পূর্বপরিচিত অপু নামে একজন ফোন করে তাকে একটি মার্কেটের সামনে আসতে বলেন। ওই কিশোরী মার্কেটের সামনে গেলে অপু কয়েকজনের যোগসাজশে পাশের নির্মাণাধীন একটি ভবনে নিয়ে যায়। পরে এরা সবাই মিলে রাত ৯টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। তারপর মেয়েটি রাস্তায় এসে চিৎকার করলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১৯টি। জানুয়ারিতে ১৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৩টি, মার্চে ১৪টি, এপ্রিলে ১৪টি, মে মাসে ২৫টি, জুন মাসে ২৪টি এবং জুলাই মাসে ১৫টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গণধর্ষণ  তো আছেই, এর সঙ্গে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ধর্ষণের ঘটনাও। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এই সাত মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫২৬টি। এর মধ্যে জুলাই মাসেই ঘটেছে ৯৭টি ধর্ষণের ঘটনা। আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪১ জনকে। গত বছরের ১ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরে দুই বোনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। বাড়ির উঠোন থেকে মুখ বেঁধে তুলে নিয়ে তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামগঞ্জ বাজারের পাশে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে দুই বোনকে গণধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাদের এই ঘটনার শিকার হতে হয়। এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আকাশ সংস্কৃতির কারণে উগ্র পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। আর এসব সিরিয়ালে কখনো স্বাভাবিক পারিবারিক পরিবেশ কিংবা আদর্শগত ভিত্তি থাকে না। সমাজের নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে এই নোংরা মনোভাব। ধর্ষণের ঘটনা কেন ঘটছে এর কারণ অনুসন্ধান করতে গবেষণা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি এসব ঘটনার উৎসমুখ খুঁজে বের করতে হবে ও প্রয়োজনে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর