শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

আরব আমিরাতের ৭০ ভাগ মুয়াজ্জিন বাংলাদেশি

কামরুল হাসান জনি, ইউএই

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাচীনতম ফুজাইরা আল বিদিয়া মাটির মসজিদ ও আবুধাবিতে নির্মিত বৃহত্তম শেখ জায়েদ মসজিদ ছাড়াও আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, আল আইন, ফুজাইরা, আজমান ও রাস আল খাইমা প্রদেশে বড়-ছোট মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে প্রতিদিন লাখো মুসল্লিকে নামাজ পড়ান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাফেজ-ইমামরা। প্রতি মসজিদে আবার ইমামের সহযোগী হিসেবে রয়েছেন একজন করে মুয়াজ্জিন। আর মুয়াজ্জিন হিসেবে কম হলেও ৭০ ভাগ বাংলাদেশি প্রবাসী দায়িত্ব পালন করছেন। মুয়াজ্জিন হলেও তারা পান ইমামের মর্যাদা। এমনকি ইমাম পেশায় রেখেই ভিসা ইস্যু করা হয় তাদের। স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদে দায়িত্বরত বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিনরা জানান, এ পেশায় আসতে হলে স্থানীয় ইসলামিক সোসাইটি ওয়াকাফে জমা করতে হয় শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, দিতে হয় দক্ষতা ও পারদর্শিতার পরীক্ষা। আবুধাবিস্থ সাইফ বিন দরবেশ মসজিদের মুয়াজ্জিন ফেনীর হাফেজ আবদুল হাই জানান, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জমা করতে হয় স্থানীয় ওয়াকাফে। সনদ যাচাই-বাছাই করে তারা পরীক্ষার জন্য ডাকেন। সেখানে নেওয়া হয় সূরা, কিরাত ও হেফজের ওপর নানা পরীক্ষা। উত্তীর্ণ হলেই মেলে চাকরি। বেতন ধরা হয় বাংলাদেশি টাকায় এক থেকে দেড় লাখ। এ ছাড়া পাওয়া যায় থাকার উন্নত ব্যবস্থা। সন্তানদের পড়ালেখার ক্ষেত্রেও দেওয়া হয় সুযোগ-সুবিধা। দুবাই নাদ রাশেদ মসজিদের ইমাম জয়নুল আবেদিন জানান, মূলত সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সহি পাঠ ও সঠিক উচ্চারণের কারণে স্থানীয়দের কাছে বেশ কদর রয়েছে বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিনদের। এ ছাড়া ওয়াকাফ থেকে পাস করলে ইমামরা ফাইভ গ্রেডের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। পাশাপাশি পরিবার নিয়ে আসার সব ব্যবস্থা করা হয়। এ ক্ষেত্রে বেতন কম হলেও তেমন বেগ পেতে হয় না। তবে কম বেতনধারীরা ছাত্র পড়িয়ে আয় করতে পারেন বাড়তি টাকা। আমিরাতের বিভিন্ন প্রদেশ ঘুরে জানা গেছে, ছোট-বড় প্রায় মসজিদেই এ পেশায় এশিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কদর বাংলাদেশিদের। এজন্য সরকারি ওয়াকাফের ইমাম-মুয়াজ্জিন ছাড়াও অনেক মসজিদে স্থানীয় আরবীয়দের অধীনে কাজ করেন বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিনরা। তাদের সম্পূর্ণ খরচ ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় প্রাইভেট সেক্টর থেকে। জানা গেছে, দর্শনার্থীর ভিড় থাকা দুবাইয়ের ৫০০ বছরের প্রাচীন আল বিদিয়া মাটির মসজিদে দীর্ঘদিন যাবৎ দায়িত্ব পালন করছেন হাটহাজারী উপজেলার ইমাম হাফেজ আহমদ। এদিকে সম্মানজনক এ পেশায় নিয়োজিত থেকে নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যবোধের কথা জানালেও ভিসা জটিলতায় দীর্ঘদিন ইমাম-মুয়াজ্জিন হিসেবে সরাসরি দেশ থেকে কেউ আসতে পারছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আল আইন মুহাম্মদ সাইদ সোহাই আল মাজরুয়ি মসজিদের ইমাম সোনাগাজী উপজেলার হাফেজ আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় ওয়াকাফের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ইমাম-মুয়াজ্জিনরা বাংলাদেশি টাকায় মাসিক বেতন পান এক থেকে দেড় লাখ। সম্মানজনক পেশা ও সুযোগ-সুবিধা থাকায় যেমন নিজেরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তেমনি দেশের জন্যও এটি গর্বের। তবে দীর্ঘ পাঁচ বছর ভিসা জটিলতা থাকায় নতুন করে দেশ থেকে কোনো ইমাম-মুয়াজ্জিন আসার সুযোগ পাচ্ছেন না।’ স্থানীয় ওয়াকাফ-প্রধানদের সঙ্গে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হলে আরও অসংখ্য ইমাম-মুয়াজ্জিন আমিরাতে আসার সুযোগ পেতে পারেন বলে জানান তিনি। সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াকাফ ছাড়াও অনেক বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিনের আমিরাতের বিভিন্ন মসজিদে প্রাইভেটভাবে কাজ করারও দারুণ সুযোগ রয়েছে। দ্রুত ভিসা জটিলতার অবসান হলে এ পেশায় আরও অনেক দক্ষ হাফেজ-আলেম সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এতে একদিকে বাড়বে দেশের সম্মান, অন্যদিকে বাড়বে রেমিট্যান্স।

সর্বশেষ খবর