রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

নোয়াখালীতে তারকা প্রার্থীর ছড়াছড়ি

আকবর হোসেন সোহাগ, নোয়াখালী

নোয়াখালীতে তারকা প্রার্থীর ছড়াছড়ি

একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নোয়াখালীর ছয়টি সংসদীয় আসনে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক স্পিকার আবদুল মালেক উকিল ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এলাকা হিসেবে পরিচিত এ জেলা। বিগত সময়ে নোয়াখালী বিএনপির ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত থাকলেও এখন পুরোপুরি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। এ জেলায় সব হেভিওয়েট ও তারকা প্রার্থীর অবস্থান। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি এ জেলায় রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মতো প্রবীণ নেতা। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। পোস্টার, ব্যানারের  পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা। নোয়াখালী জেলায় সংসদীয় আসন ৬টির সবকটিই বর্তমানে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যদের কব্জায়। বিএনপিও তাদের পুরনো শক্তি ফিরে পেতে নতুন কমিটি নিয়ে তৎপর। ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেতে এলাকার পাশাপাশি হাইকমান্ডের দ্বারস্থ হচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

নোয়াখালী ১ (চাটখিল- সোনইমুড়ি) : এ আসনে বর্তমানে সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এইচ এম ইব্রাহীম। তিনি দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও দলীয় নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। একাদশ নির্বাচনেও তিনি দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিয়মিত এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে ইব্রাহীম এবারও মনোনয়ন পাবেন। দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে সবুজ সংকেত পেয়ে তিনি মাঠে কাজ করছেন একচেটিয়া। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার রুহুল আমীন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপি থেকে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রার্থী হিসেবে মাঠে তৎপর রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন। তার সম্ভাবনা অনেকটাই নিশ্চিত। নেতা-কর্মীদের মধ্যে তারও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন কামরানও মনোনয়নপ্রত্যাশী। সাবেক জাপা নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আ্য্যডভোকেট মাহবুবুর রহমানও এ আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ ছাড়া জাপার কেন্দ্রীয় নেতা দিদারুল আলমও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ি) : এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য বিশিষ্ট শিল্পপতি মোরশেদ আলম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিও দলের মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি আতাউর রহমান ভূইয়া মানিকও দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে তারও শক্ত অবস্থান রয়েছে। গরিব-দুঃখীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরছেন তিনি। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করতে চান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন ভুঁইয়া। তিনিও দলের সমর্থকদের নিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের। তিনি নিয়মিত এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তবে দলের মনোনয়নের চেষ্টা করছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা কাজী মফিজুর রহমান। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে হাসান মনজুরের নাম শোনা যাচ্ছে।

নোয়াখালী-৩  (বেগমগঞ্জ) : এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য গ্লোব গ্রুপের পরিচালক মামুনুর রশিদ কিরণ। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের মনোনয়নের প্রত্যাশায় এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এ ছাড়াও  দলের মনোনয়ন পেতে ১/১১ সময়ের আলোচিত সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের ছোটভাই মিনহাজ আহমেদ জাবেদ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতিও। বেগমগঞ্জের উন্নয়নে তার ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়াও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এনায়েত উল্লা ও চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র আখতার হোসেন ফয়সলের নামও শোনা যাচ্ছে।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে একক প্রার্থী হিসেবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও পরপর কয়েকবার সংসদ সদস্য বরকত উল্লাহ বুলুর নাম। তিনি এলাকার উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন। নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। মামলাজনিত কারণে তিনি নির্বাচন না করতে পারলে তার সহধর্মিণী শামীমা বরকত লাকী নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) রেজাউল হক ও বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ড্যাব নেতা ডাক্তার মাজহারুল ইসলাম দোলনের নামও শোনা যাচ্ছে।

নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) : এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরই মধ্যে তিনি তার রাজনৈতিক অবস্থান অনেক শক্তিশালী করেছেন। নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি দলের একক প্রার্থী হিসেবে প্রতিনিয়ত গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুরো জেলায় তার অবস্থান রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির হেভিওয়েট একক প্রার্থী হিসেবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক হুইপ মো. শাহজাহান। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করছেন। নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এই আসনে বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) আবদুল মান্নানও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া সাংবাদিক ফিরোজ আলমও এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) : নোয়াখালীতে এ আসনকে ‘ভিআইপি’ আসন বলা হয়। কথায় আছে এ আসন থেকে যিনি নির্বাচিত হন তিনি মন্ত্রী হন এবং ওই দলই ক্ষমতায় যায়। এই আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলেও নিজ সংসদীয় এলাকার সঙ্গে রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। একইভাবে তার বিপরীতে এ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি দলের একক প্রার্থী হিসেবে নিয়মিত এলাকায় যোগাযোগ রাখছেন। নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। এখানে বিএনপি থেকে আবারও প্রার্থী হবেন মওদুদ আহমদ। ভিআইপি প্রার্থী এই দুজনই এলাকায় গণসংযোগসহ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন।

নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) : এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আয়েশা ফেরদৌস। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়াও তার স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক ওয়ালী উল্লাহ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক আমির হোসেনও মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির তেমন অবস্থান না থাকলেও ব্যক্তি ইমেজের কারণে সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল আজিমও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসেবেই তিনি লড়তে পারেন। তবে বিএনপি থেকে সাবেক ছাত্রনেতা কাদের হালিমিও মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে এলাকায় তিনি নেতা-কর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এ ছাড়া  উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন এবং বর্তমান উপজেলা সভাপতি আলাউদ্দিন মনোনয়নপ্রত্যাশী।

সর্বশেষ খবর