রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বৃষ্টিতে ডুবল ঢাকা-চট্টগ্রাম জনদুর্ভোগের শেষ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

বৃষ্টিতে ডুবল ঢাকা-চট্টগ্রাম জনদুর্ভোগের শেষ নেই

বর্ষণে জলজটে নাকাল রাজধানীবাসী। থেমে গেছে জীবনযাত্রা। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়ক থেকে গতকাল তোলা ছবি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দিনভর বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, কাদা আর যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকার জীবনযাত্রা। আর উন্নয়নের নামে রাস্তা খুঁড়ে রাখায় কাদাপানিতে রাস্তা এবং ফুটপাথ দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে নগরবাসীকে। অন্যদিকে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ফের ডুবেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। ভারিবর্ষণ অব্যাহত থাকায় ফের পাহাড় ও ভূমিধসের শঙ্কায় প্রশাসন। নেওয়া হয়েছে দুর্যোগ প্রস্তুতি।

কয়েক দিনের টানা গরমে হাঁপিয়ে উঠেছিল নগরবাসী। কিছুটা স্বস্তি পেতে আশা ছিল বৃষ্টির। কিন্তু সে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিতেই রাজধানী জুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নগরীর মালিবাগ, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, দক্ষিণখান, পূর্ব জুরাইন এবং পুরান ঢাকার অধিকাংশ এলাকা পানিতে থৈ থৈ করছে। আর বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় গাড়ি সড়কে চলাচল করতে গিয়ে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার কারণে রাস্তায় তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট। আব্দুল্লাহপুর থেকে মহাখালী পর্যন্ত দীর্ঘ গাড়ির লাইন চোখে পড়ে। একই অবস্থা ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, গাবতলী এবং মিরপুরের। আবহাওয়া অফিসের ডিউটি অফিসার রুহুল কুদ্দুস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গতকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে বৃষ্টি হয়েছে ৩৫ মিলিমিটার। আগামীকালও আকাশ মেঘলা থাকবে বলে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে। তবে হালকা বৃষ্টির মাঝে রোদের উপস্থিতিও থাকতে পারে বলে আশাবাদ রয়েছে। চট্টগ্রামে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২২০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারিবর্ষণ আরও তিন দিন অব্যাহত থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস। আর এই অব্যাহত বৃষ্টিতে জনজীবনে সীমাহীন ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।  সরেজমিন রাজধানীর দক্ষিণখানে দেখা যায়, অধিকাংশ এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর পানি। এক সপ্তাহ রোদ উঠলেও শুকায় না একদিনের বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি। রাস্তা, ফুটপাথ ছাপিয়ে পানি পৌঁছেছে বাড়ির অন্দর মহল এবং দোকানের ভিতরে। বৃষ্টির পানি দোকানে ঢুকে নষ্ট করে দিচ্ছে মালামাল। জলাবদ্ধতার কারণে দোকান খুলতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। দক্ষিণখান এলাকার মুদি দোকানি লিয়াকত আলী বলেন, প্রায় তিন মাস চলছে দোকান খুলতে পারি না। দুই দিন খুলি তো সপ্তাহের পাঁচদিনই বন্ধ রাখতে হয়। দোকানের ভাড়া দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। রাস্তা ঠিক না করলে আমরা আর এই এলাকায় ব্যবসা করে খেতে পারব না। একই অবস্থা দক্ষিণখানের আশকোনা ও পূর্ব জুরাইন এলাকার। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে জমে যায় হাঁটু পানি। আর বৃষ্টি বেশি হলে তো কথাই নেই। এর মধ্যে পূর্ব জুরাইন এলাকার রাস্তা খুঁড়ে রাখায় দুর্ভোগ থেকে ঘটছে দুর্ঘটনা। ফুটপাথ সংস্কারের নামে ড্রেনের ঢাকনি খুলে আশপাশে রেখে দেওয়া হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। তেজগাঁও শিল্প এলাকার রাস্তাগুলো খানাখন্দে ভরা। আর ফুটপাথের অবস্থা বেশ শোচনীয়। ফুটপাথ খুঁড়ে মাটির স্তূপ করে রাখা হয়েছে চারপাশে। উন্নয়ন কাজের জন্য মাটি খোঁড়া হলে সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার নিয়ম থাকলেও এখানে মানা হয় না কিছুই। পাশেই দেখা যায় ফুটওভার ব্রিজ তৈরির জন্য দুপাশে পুঁতে রাখা হয়েছে পিলার। এই এলাকার বাসিন্দা ফরিদুর রহমান বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে ফুটওভার ব্রিজ তৈরির কথা শুনছি। শুরুর দিকে তোড়জোড় করে পিলার বসানোর পর আর কোনো অগ্রগতি নেই। আর তার ওপর ফুটপাথে ইট, মাটি রেখে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। মিরপুর-১০ পার হলেই চোখে পড়ে রাস্তা কাটাছেঁড়ার ভয়াবহতা। শ্যাওড়াপাড়ার অলিগলির রাস্তা একটু পরপরই কাটা। প্রাইভেট কার বা রিকশা তো দূরের কথা হেঁটে চলাচল করাই মুশকিল। পীরেরবাগ এলাকার মাইকের দোকান পার হলে দেখা যায়, স্যুয়ারেজের লাইন বসানোর জন্য রাস্তার পুরোটাই কেটে রাখা হয়েছে। গর্তের দুই পাশের মাটির স্তূপের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শিশু, বৃদ্ধ এবং নারী-পুরুষ। একটু অসতর্ক হলেই পা পিছলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ১৫ ফুট গর্তে। চট্টগ্রামের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ভারিবর্ষণে ঝুঁকি বাড়ছে পাহাড় ধসের। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, চলমান ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামে আবার পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা দুর্যোগ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সব ইউএনওকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার মো. রিয়াজুল কবির বলেন, ভারিবর্ষণ হলেও বিমান ওঠানামা স্বাভাবিক ছিল। আবহাওয়ার কারণে বিমান চলাচলে কোনো প্রভাব পড়েনি। বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাগর উত্তাল থাকায় লাইটারেজ জাহাজ বহিনোঙরে যাওয়া কিছুটা ব্যাহত হওয়ায় লাইটারিং কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বন্দর থেকে মাল ডেলিভারি, জেটিতে লোডিং-আনলোডিংয়ের গতিও ব্যাহত হচ্ছে। জানা যায়, শুক্রবার রাত থেকে নগরী ও আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় ভারিবর্ষণ শুরু হয়। এতে গতকাল সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যেতে শুরু করে। সামুদ্রিক জোয়ারের সময় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ৮টি ওয়ার্ডের অন্তত অর্ধশতাধিক স্পট অস্থায়ীভাবে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানির নিচে তলিয়ে যায়। এসব এলাকার একতলা বাড়িঘর এবং দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়লে জনগণ তীব্র ভোগান্তির মুখে পড়েন।

চট্টগ্রামে ভারি বর্ষণ আরও তিন দিন : চট্টগ্রামে ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে আরও তিন দিন। চট্টগ্রামের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। চট্টগ্রাম আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

সর্বশেষ খবর