বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামণির প্রথম অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। গতকাল সকাল সোয়া ৮টায় অস্ত্রোপচার কক্ষে তাকে নেওয়া হয়। পৌনে ৯টা থেকে শুরু হয় অস্ত্রোপচার। আড়াই ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে তার ডান হাতের আক্রান্ত অংশ থেকে প্রায় তিন কেজি ওজনের টিউমার ফেলে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, প্রাথমিকভাবে অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। জ্ঞান ফিরে এসেছে মুক্তামণির। তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। এদিকে মুক্তামণির অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ড. সামন্ত লাল সেনকে ফোন করে সব চিকিৎসককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১টার দিকে ড. সামন্ত লাল সেনকে ফোন করে তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ড. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়। তিনি বলেন, যতদূর চেষ্টা করা যায় মুক্তামণির হাত রেখেই তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হোক।’ অস্ত্রোপচার শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বলেন, ‘মুক্তামণির ডান হাত অক্ষত রাখা হয়েছে। অস্ত্রোপচার প্রাথমিকভাবে সফল। আমরা যতটা প্রত্যাশা করেছিলাম, মুক্তামণি তার চেয়েও ভালো আছে। তবে তাকে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। কারণ তার ফুসফুসের সমস্যাসহ অন্যান্য জটিলতা রয়েছে। টিউমার শরীরের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে ছিল। হাতের অংশটুকু বেশি খারাপ ছিল। ওটা অপসারণ করা হয়েছে। তার হাত ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তামণির শরীর থেকে সব টিউমার সরাতে আরও পাঁচ-ছয়টি অস্ত্রোপচার লাগবে। ওর শারীরিক অবস্থা বুঝে পরবর্তী অস্ত্রোপচারের সময় ঠিক করা হবে। দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে মুক্তামণিকে। যেদিন ও বাড়িতে ফিরতে পারবে, সেদিন আমরা বলতে পারব ও ঝুঁকিমুক্ত। এই সফলতা সম্মিলিত উদ্যোগ। সবার প্রচেষ্টার ফলে প্রাথমিকভাবে সফল হওয়া গেছে।’ তার নেতৃত্বে ২০ জন চিকিৎসকের একটি দল অস্ত্রোপচারে অংশ নেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক চিকিৎসক জুলফিকার লেনিন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এখন পর্যন্ত যখন যা লেগেছে সব করা হয়েছে। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। রক্তনালির টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামণি এখন সবার কাছে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। সব ধরনের খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরায় জন্মের দেড় বছর বয়স থেকে মুক্তামণির ডান হাতের সমস্যার শুরু। প্রথমে হাতে টিউমারের মতো হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে তার ডান হাতটি ফুলে অনেকটা কোলবালিশের মতো হয়ে যায়। সে বিছানাবন্দী হয়ে পড়ে। মুক্তামণির রোগ নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠে। ১১ জুলাই ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মুক্তামণিকে ভর্তি করা হয়। পরে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।