সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভোগান্তির শেষ নেই টোল প্লাজায়

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের মূল কারণ

মো. আল আমিন, সোনারগাঁ, জাহাঙ্গীর আলম হানিফ, রূপগঞ্জ (নারায়নগঞ্জ)

ভোগান্তির শেষ নেই টোল প্লাজায়

টোল প্লাজায় গাড়ির লাইন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুটি সেতুর টোল প্লাজায় যাত্রী ভোগান্তি চরমে উঠেছে। মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতুতে অতিরিক্ত ওজনবাহী গাড়ি নিয়ন্ত্রণে স্কেল বসিয়ে টাকা আদায়ের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। একই কারণে সংবাদপত্রের গাড়ি সময়মতো গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারছে না। টোল প্লাজার ওজন স্কেলে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান থেকে চাঁদাবাজিই যানজটের কারণ বলে জানা গেছে। আসন্ন ঈদে এ যানজটই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মূল ভোগান্তির কারণ হওয়ার আশঙ্কা চালকদের। এদিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চন টোল প্লাজায়ও টোল আদায়ে ধীর গতিসহ নানা কারণে নিত্য যানজট লেগে থাকে। দুর্ভোগ পোহাতে হয় অসংখ্য মানুষকে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ মেঘনা সেতুতে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান সিএনএফ ওভারলোড গাড়ি নিয়ন্ত্রণে স্কেল সিস্টেম মেশিন বসিয়েছে। ফলে অতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাক ও লংভেহিক্যাল গাড়িগুলো থামিয়ে চেক করা হচ্ছে। এতে সেতুর উভয় পাশে ১৫-২০  কিলোমিটর যানজটের সৃষ্টি হয়। ওজন স্কেলে কিছু অসাধু লাইনম্যান স্কেল কর্মকর্তার যোগসাজশে ওভারলোড ট্রাকগুলো থেকে চাঁদাবাজি করে ওভারলোড ট্রাকগুলোকে সেতু দিয়ে পারাপারের সুযোগ করে দেয়। এতে ওভারলোড যানবাহন চলাচলের ফলে মেঘনা সেতুটির স্থায়িত্বও হুমকিতে পড়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, ২০ টনের অধিক ওজনের যানবাহন থেকে ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের নিয়ম থাকলেও প্রায় সব পণ্যবাহী যানবাহন থেকেই চাঁদা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ চালকদের। ওজন কম হলেও কোনো মাফ নেই। অনেক ট্রাক ও কনটেইনারবাহী গাড়ির চালক বা হেলপার অতিরিক্ত টাকা দিতে না চাইলে লাইনম্যানদের সঙ্গে ঝগড়া হয়।  সরেজমিনে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওজন স্কেলটি নিয়ন্ত্রণ করে একটি অসাধু চক্র, যেখানে টোল প্লাাজার সংশ্লিষ্টরাও জড়িত। একই অবস্থা দাউদকান্দি সেতুর টোল প্লাজার ক্ষেত্রেও। সেখানকার ওজন স্কেলের কারণেও যানবাহনের ধীরগতি ও যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। নুরে আলম নামে এক ট্রাকচালক বলেন, ‘সেতু দিয়ে চলাচল করার মতো ওজনের কম হলেও আমার কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা নিয়েছে টোল কর্তৃপক্ষ। সেখানেও আমার ট্রাকের মালের ওজন কত তা রসিদে লেখা নেই।’ অনেক চালক চাঁদা দিতে না চাইলে টোলের লাইনম্যানরা গাড়ি ভাঙচুরসহ মারধর করে। মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ খুলে রেখে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রসিদ না দিয়ে চাঁদা নিয়েই ছেড়ে দেওয়া হয় অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন। ওজন স্কেলে তিন শিফটে ১০ জন করে ৩০ জন কাজ করে। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখা যায় গাড়ি স্কেলে না পাঠিয়ে দরকষাকষির মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে ছেড়ে দেওয়ার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোল প্লাজায় ওভারলোড গাড়ি নিয়ন্ত্রণে অনলাইন স্কেলে টাকা আদায়ে ধীরগতি আর চালকদের এলোপাতাড়ি গাড়ি চলায় দিনে-রাতে যানজট লেগেই থাকে। ফলে টোল প্লাজা থেকে প্রতিদিন ১/২ কিলোমিটারজুড়ে ওভারলোড যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা।

এ বিষয়ে মেঘনা সেতুর স্কেল ঠিকাদার কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক মেজর (অব.) জিয়াউল আহসান জিয়া বলেন, ‘টোল আদায়কারীর কেউ যদি এমন কাজ করে থাকে আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। চাঁদা আদায়ের বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।’ কাঁচপুর হাইওয়ে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তৈয়ব হোসেন বলেন, টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের কারণেই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান থামিয়ে দেড়-দুই হাজার টাকা আদায় করছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

ভোগান্তি কাঞ্চন টোল প্লাজায়

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চন টোল প্লাজা যানবাহন চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। টোল প্লাজা কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, টোল আদায়ে ধীর গতিসহ নানা কারণে এই সড়কে নিত্য যানজট লেগে থাকে।

কাঞ্চন টোলপ্লাজায় ৪টি টোল বক্স থাকলেও লোকবল সঙ্কটে মাঝে মধ্যে ২টি টোল বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া অতিরিক্ত টোল আদায় করা নিয়ে প্রায়ই টোল আদায়কারীদের সঙ্গে যানবাহন চালকদের বাকবিতন্ডা হয়। এতে সময় ক্ষেপন হয়। সেতু এলাকায় দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। যানজট সেতুর দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকা ছাড়িয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীসহ মালবাহী যানবাহনের চালকরা। চালকদের অভিযোগ, কাঞ্চন সেতুতে অতিরিক্ত টোল আদায়ই যানজটের অন্যতম কারণ। এ নিয়ে চালকদের সঙ্গে টোল প্লাজার কর্মীদের প্রায়ই ঝগড়া হয়। অতিরিক্ত টোল আদায় করলেও সেতু মেরামতের কোন খবর নেই। সেতুর অনেক অংশ খানাখন্দে ভরা। রয়েছে বড় বড় গর্ত। এসব খানাখন্দে ও গর্তে পড়ে অনেক সময় যানবাহন বিকল হয়ে যায়। জয়দেবপুর থেকে আসা ট্রাক চালক রহিম মৃধা বলেন, টোল প্লাজায় তারা অতিরিক্ত টাকা দাবি করে। এটা নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হয়। বাস চালক শেখ আব্দুল করিম বলেন, এই রোডে আইলেই বাজান জানডা বার অইয়া যায়গা। টোলের লেইগ্যা ডেলি জ্যাম থাকে এই সড়কে।

কাঞ্চন সেতু প্রকল্প ও টোলপ্লাজার পরিচালক মোহাম্মদ কারিবুল ইসলাম জানান, সেতুতে এখন চাপ বেশি পড়ে। ৩০০ ফুট রাস্তা ও এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। মাত্র দুটি টোল বক্স দিয়ে টোল আদায় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া সামনে কোরবানির ঈদকে কেন্দ  করে গরু বোঝাই যানবাহন চলাচলের কারণে চাপ এখন বেশি। টোল আদায়ের জন্য ১৮জন লোক রয়েছে। যানবাহনের চাপ না থাকলে মাঝে মাঝে একটি বা দুটি টোল বন্ধ রাখা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর