শিরোনাম
সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বেসরকারি খাতের ৪৮ হাজার কোটি টাকা আটকা মামলায়

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কোটি টাকা আটকে আছে মামলার জালে। বিনিয়োগকৃত অর্থ উদ্ধারে বিভিন্ন ধরনের মামলার সংখ্যাও পৌঁছেছে কয়েক হাজারে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য মিলেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর রিট ও অর্থঋণ আদালতে ২৮ হাজার ৪১১টি মামলায় জড়িত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। দেশের বিভিন্ন আদালতে এই মামলাগুলো চলমান রয়েছে। নিষ্পন্ন না হওয়ায় মামলার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিনিয়োগের বাইরে থেকে যাচ্ছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা জড়িত রয়েছে অর্থঋণ আদালতের মামলায়। ২৪ হাজার ৫১৫টি মামলায় প্রায় ২৯ হাজার ১১৯ কোটি টাকা আটকে আছে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের। অন্যদিকে বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ হাজার ৮২টি মামলায় প্রায় ২ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা আটকে গেছে। অর্থঋণ মামলার পরেই রয়েছে রিট মামলা। বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ১ হাজার ৯৯০টি রিট মামলার বিপরীতে জড়িত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৭ কোটি টাকা প্রায়। বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৪২৪টি রিট মামলার বিপরীতে জড়িত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৪৪ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কিছু সার্টিফিকেট মামলাও রয়েছে। তবে তাতে জড়িত অর্থের পরিমাণ খুবই কম। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকার  বিনিয়োগ আটকে আছে বিভিন্ন ধরনের অনিষ্পন্ন মামলায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ঋণগ্রহীতার জামানত ও প্রকল্প সম্পর্কে খোঁজখবর না নিয়ে ঋণ দেওয়ার পর তা মন্দ ঋণে পরিণত হয়। ওই ঋণ আদায়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শেষে বাধ্য হয়ে মামলা করেছে। এসব মামলা পরিচালনায় আবার ব্যাংকগুলোর ভল্ট থেকে খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বিচারক স্বল্পতায় আবার এসব মামলা দিনের পর দিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঋণের কিস্তি আটকে গেলে মূলত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আদালতে যায়। সঠিকভাবে ঋণ যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হলে এত বেশি অর্থ মামলায় আটকে থাকত না। আবার আদালতে যাওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগছে। অর্থঋণ আদালতের মামলা ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটি হচ্ছে না। এ ধরনের মামলায় যুক্তিতর্ক বেশি থাকে না। ব্যাংক যা বলে তাই হয়। সেক্ষেত্রে দু-একটা শুনানির পর মামলা নিষ্পত্তি করে দিলে ভালো হয়। এ ছাড়া বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিলে আদালতে মামলা জট কমে যাবে বলে মনে করেন সাবেক এই ব্যাংকার। ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যবসা একটি অনিশ্চিত বিষয়। কখনো ক্ষতি হয়, আবার কখনো রিকভার করে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জামানত রেখে সঠিকভাবে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে ব্যাংকারদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। দিতে হবে প্রশিক্ষণ।

সর্বশেষ খবর