সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

লাউয়াছড়ায় বিরল প্রজাতির উল্লুক

নিজস্ব প্রতিবেদক

লাউয়াছড়ায় বিরল প্রজাতির উল্লুক

লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ অতি বিপন্ন বিরল প্রজাতির উল্লুক। এখানে রয়েছে প্রায় ৭০ প্রজাতির উল্লুকের বসবাস। রেইন ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত এই বনে আরও রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী আর নানা জাতের দুর্লভ বৃক্ষ। এখানে রয়েছে ১৬৭ জাতের বৃক্ষ। ছোট্ট শহর শ্রীমঙ্গল। দৃষ্টিজুড়ে চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। এখানে রয়েছে উটের পিঠের মতো টিলা আর মনোরম চা বাগান। কোনো কোনো স্থান ভ্রমণপিপাসুদের কাছে মেলে ধরার জন্য যথেষ্ট। আর এখানেই রয়েছে লাউয়াছড়া বন। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শ্রীমঙ্গল পৌরসভা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঢাকা থেকে দূরত্ব ১৯৬ কিলোমিটার। আর আয়তন ১২৫০ হেক্টর। বিরল প্রজাতির উল্লুকের বাস এখানে। এরা হাজারো পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। বন বিভাগ এসব উল্লুকের লালন-পালনের দায়িত্ব নিয়েছে। ফলে উল্লুকের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এ বন।  

এ বনে আরও রয়েছে অতি বিপন্ন প্রজাতির উল্লুক গিবনস বা লেজবিহীন বন্যপ্রাণী। অনেকটা বানরের মতো দেখতে এরা। ভারত, চীন, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশে এ প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। এ প্রাণী সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। উল্লুক পরিবারে কমপক্ষে দুই থেকে পাঁচ সদস্য মিলে বসবাস করে।

পুরুষ উল্লুক কালো রঙের হয়। স্ত্রী প্রজাতি সাদা ও বাদামি মিশ্রিত হয়। উল্লুক উঁচু পাহাড় ও বড় বড় গাছের ডালে বাস করে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে উল্লুকের দিন কাটে হৈহল্লা ডাক দিয়ে। অনেকদূর থেকে শোনা যায় উল্লুকের ধ্বনি। এই প্রাণী পর্যটকদের কাছে টানতে বেশ পারদর্শী। এ বনের উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে বানর, চশমা বানর, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, মায়া হরিণ ও বন্য শূকর ইত্যাদি। এ বনে ২৪৬ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে ৮ প্রজাতির সুচক পাখিও আছে। সুচক পাখির মধ্যে ভিমরাজ, পাহাড়ি ময়না, কাওধনেস, বনমোরগ, ফোঁটা কণ্ঠি সাতভায়লা এবং শ্যামা। লাউয়াছড়ার নৈসর্গিক দৃশ্য আর একটানা ঝিঁ ঝিঁ পোকার গুঞ্জন প্রশান্তি দেয় চোখ আর মনের। শুধু কি তাই? বিভিন্ন ধরনের হরিণ হয়তো অনেকেই দেখেছেন, কিন্তু মায়া হরিণ! হ্যাঁ, মায়া হরিণ অবলোকন করতে হলেও লাউয়াছড়ায় যেতে হবে। ভোরে লাউয়াছড়ার ফুট ট্রেইলে হাঁটতে থাকুন। চারদিকে নিঝুম আর নির্জনতা ভেদ করে পাহাড়ের মধ্য থেকে ভেসে আসবে মায়া হরিণের ডাক। শব্দগুলো পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে পর্যটকদের কানে মায়াময়ী ইন্দ্রজালের সৃষ্টি করবে। হয়তো শরীরটা খানিক ছমছম করতে পারে। লাগতে পারে রোমাঞ্চ। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গা ঘেঁষা রয়েছে তিনটি আদিবাসী পল্লী। দুটি খাসিয়া (মাগুরছড়া ও লাউয়াছড়া) ও একটি ত্রিপুরাদের পাড়া। আদিবাসীদের জীবনযাত্রা সাধারণত পাহাড়ি কৃষ্টি-কালচারের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ইত্যাদি দেখাও পর্যটকদের জন্য বাড়তি পাওনা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর