মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিএনপির আমান, আওয়ামী লীগে কামরুল না শাহীন

রফিকুল ইসলাম রনি

বিএনপির আমান, আওয়ামী লীগে কামরুল না শাহীন

দেশের অন্যান্য সংসদীয় এলাকার মতোই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকা-২ (১৭৫-কেরানীগঞ্জ-কামরাঙ্গীরচর-সাভার) আসনে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা জোর প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত। পিছিয়ে নেই সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও। ২০০৮ সালের আগে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল ঢাকা-২ আসন এলাকা। নবম সংসদ নির্বাচনের পর আসনটি এখন আওয়ামী লীগের। এ আসনে মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোটেও নবীন-প্রবীণের লড়াই হওয়ার জোর সম্ভবনা। এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে দুই মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। নবম সংসদ নির্বাচনে কামরুল ইসলাম বিএনপি প্রার্থী মো. মতিউর রহমানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন কামরুল ইসলাম। এবার তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শাহীন আহমেদ। তিনি গত দশম সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এ আসনে বিএনপির শক্তিশালী ও জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন ওই দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। কিন্তু মামলা জটিলতায় নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেননি। তাই তার কাছের লোক হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করান বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এবার বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের তুখোড় ছাত্রনেতা আমান উল্লাহ আমান। তবে মামলা সংক্রান্ত বা কোনো কারণে নির্বাচন করতে না পারলে তার স্ত্রী সাবেরা আমান কিংবা ছেলে ঢাকা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি সেক্ষেত্রে প্রার্থী হতে পারেন। ফলে এ আসনে নবীন-প্রবীণে লড়াই হওয়ার আভাস মিলছে। মনোনয়নযুদ্ধ থেকে শুরু করে নির্বাচন সবই জোড় লড়াই নবীন-প্রবীণে। এক সময়ের বিএনপি দুর্গখ্যাত আসনটিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের কামরুল ইসলাম। নবম সংসদে এমপি হওয়ার পর আইন প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন; বর্তমান সরকারের খাদ্যমন্ত্রী তিনি। সরেজমিন দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সাড়ে আট বছরের শাসন আমলে এলাকার উন্নয়ন হলেও পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার উন্নতি হয়নি। এবার আওয়ামী লীগের ভিতরেই পরিবর্তনের গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে কেরানাীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের। তিনি নিয়মিত নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ, কর্মিসভা, পথসভা করে চলেছেন। দুবারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন ২০১২ ও ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পদক পেয়েছিলেন। তিনি নির্বাচনী এলাকায় শিক্ষাসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা সাবেক এ ছাত্রনেতা দলীয় মনোনয়ন পেলে আসনটি ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তবে এবারও এই আসনে মনোনয়ন চান কামরুল ইসলাম। তিনি মন্ত্রিত্ব করার পাশাপাশি নিয়মিত এলাকায় যান বলেও জানা গেছে। খোঁজখবর নেন এলাকাবাসীর। অন্যদিকে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাদের দলের প্রার্থী হিসেবে আমানকেই চান। কারণ বিগত দিনে এই আসনটি ‘আমানের’ দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। এ নির্বাচনী এলাকার মানুষের মুখে মুখে বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, আর আওয়ামী লীগে কামরুল না শাহীন? আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরেও এ আসনে এককভাবে নির্বাচন করলে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিতে পারে। এ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সহসভাপতি ও ধানমন্ডি থানা জাপা সভাপতি হাজী মো. শাহজাহান। জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ইতিমধ্যে হাজী মো. শাহজাহানকে ঢাকা-২ আসনের জন্য নাম ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড ও থানাকে শক্তিশালী করছেন। এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কামরাঙ্গীরচর থানা সভাপতি হাজী মনির হোসেন। জানা গেছে ঢাকা-২ আসনটি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আমিনবাজার ইউনিয়ন, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন, কেরানীগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন কামরাঙ্গীরচর ও হাজারীবাগ থানার সুন্দরগঞ্জ ইউনিয়ন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।

সর্বশেষ খবর