বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

তিন দেশ থেকে আসছে পিয়াজ, কমবে দাম

মোস্তফা কাজল

পনের দিনের ব্যবধানে পিয়াজের দাম ৩০ থেকে বেড়ে ৬০ টাকায় উঠেছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দাম খুব শিগগিরই স্বাভাবিক স্তরে ফিরবে। কারণ সরকার তিনটি দেশ থেকে দ্রুত গতিতে পিয়াজ নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছে। আমদানি হবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে। পিয়াজের দর সহনীয় করতে কয়েক দিন আগে মিসর থেকে পিয়াজের জাহাজ দেশে এসে পৌঁছালেও গতকাল পর্যন্ত বন্দরে ভিড়তে পারেনি জাহাজ জটের কারণে। এ জাহাজের পিয়াজ খালাস হয়ে বাজারে ঢুকলেই দাম কমতে থাকবে বলে বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। অনেকে বলছেন অতিবৃষ্টি, বন্যা ও আসন্ন কোরবানির ঈদের প্রভাবে পিয়াজের দাম বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় অতিবৃষ্টি আর বন্যায় বহু আড়তে পানি জমে মজুদ পিয়াজ নষ্ট হয়েছে। ভারতেও অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। এই ভারত থেকেই সবচেয়ে বেশি পিয়াজ আমদানি হয় বাংলাদেশে। তাই সে দেশেও বেড়ে গেছে পিয়াজের রপ্তানি দর। এ দেশটি পিয়াজের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ হওয়ায় বৃষ্টি ও বন্যা আমদানিতেও প্রভাব ফেলছে। আর ১৪ থেকে ১৫ দিন পর কোরবানির ঈদ। এ সময় পিয়াজের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয় বলে সে সুযোগটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে প্রতিদিন এখটু একটু করে বাড়ছে পিয়াজের দাম। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মিসর, চীন ও পাকিস্তান থেকে পিয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। পিয়াজের এই দাম বাড়ার জন্য পাইকারি বিক্রেতা ও আড়তদার একে অপরকে দুষছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদাররা দর বাড়িয়ে দেন। অপরদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন বেশি দাম দিয়ে পিয়াজ আমদানি করে কম দামে বিক্রির উপায় নেই। এ ছাড়া ঈদ ঘনিয়ে এলেই পিয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। কোরবানির সময় দেশে পিয়াজের বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয়। ফলে প্রতি বছরের মতো এবারও স্বাভাবিক নিয়মে বেড়েছে পিয়াজের দাম। তবে এ বছর এর সঙ্গে বাড়তি যুক্ত হয়েছে বৃষ্টি ও আগাম বন্যা। অতি বৃষ্টিতে দেশেও প্রচুর পিয়াজ নষ্ট হয়েছে এবং হচ্ছে। অনেক আড়তে পানি উঠে গেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অপরদিকে, ভারতেও বৃষ্টি হচ্ছে। সেখানেও অতিবৃষ্টির ফলে পিয়াজ নষ্ট হয়েছে। ফলে আমদানি করা পিয়াজের দাম বেড়ে ৪৫ টাকায় উঠেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছরে ২০ থেকে ২২ লাখ টন পিয়াজের চাহিদা আছে। রমজান মাস ও কোরবানিকে কেন্দ্র করে এ চাহিদা বেড়ে যায়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, এই চাহিদার বিপরীতে বাংলাদেশে পিয়াজ উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। তবে ব্যবসায়ীরা মনে করেন, পিয়াজের চাহিদার ৬০ ভাগ দেশীয় পিয়াজ দিয়ে পূরণ হয়। বাকিটা আমদানি করে মেটাতে হয়। বছরে পিয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টনের মধ্যে দেশে ১৮ লাখ টন পিয়াজ উৎপাদন হয়। ঘাটতি মাত্র ৪ লাখ টন। এই চার লাখ টন পিয়াজই পাশের দেশ ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। আর এই ৪ লাখ টন পিয়াজই বাংলাদেশে উৎপাদিত ১৮ লাখ টনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজার চলে আমদানি করা ৪ লাখ টন পিয়াজের মর্জি অনুসারে। ভারত থেকে ৫ লাখ টন নয়, মাত্র ১ লাখ টন পিয়াজ আমদানি করার প্রয়োজন হলেই দেশের বাজারের চিত্র পাল্টে যায়। ওই এক লাখ টনের দাম গিয়ে পড়ে উৎপাদিত ১৮/২০ লাখ টনের ওপর। এদিকে, দেশে গড়ে প্রতি মাসে পিয়াজের চাহিদা এক লাখ ১০ হাজার টন। এর মধ্যে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পিয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। এ ছাড়া রমজান মাস ও কোরবানির সময় পিয়াজের দেড় থেকে দুই লাখ টনের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এ চাহিদাকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট।

 

সর্বশেষ খবর