বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

কবে মুক্ত হবে ‘মুক্তাঙ্গন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

কবে মুক্ত হবে ‘মুক্তাঙ্গন’

মুক্তাঙ্গনে ডাস্টবিন, গাড়ি পার্কিং —বাংলাদেশ প্রতিদিন

পুরানা পল্টন মোড়ের দক্ষিণে ছোট্ট পার্ক, ঐতিহাসিক ‘মুক্তাঙ্গন’ এখন রেন্ট-এ-কার গাড়ির দখলে। এ পার্কের ভিতরেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার ডাস্টবিন। যে পার্ক একসময় থাকত স্লোগান বক্তৃতায় মুখরিত, ঢাকার হাইড পার্ক খ্যাত সেই মুক্তাঙ্গন এখন অবৈধ দখলদারদের হাতে অবরুদ্ধ। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের নীরব সাক্ষী মুক্তাঙ্গন শুধু বেদখল হয়ে যায়নি, পরিণত হয়েছে ডাস্টবিনে। হারিয়ে গেছে তার গৌরব ও ঐতিহ্য। এখন মুক্তাঙ্গনে নেই কোনো সভা-সমাবেশ, মিছিল-স্লোগান। তীব্র রোদ্র আর ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কেউ আর গলা ফাটিয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়া অধিকারের কথা শোনায় না। ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এক আদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য মুক্তাঙ্গনে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ডিএসসিসির এই পার্কের বড় অংশই ছয় বছর ধরে অবৈধ দখলদারদের কবলে রয়েছে। আর অদৃশ্য রাজনৈতিক শক্তির ছায়ায় নিশ্চুপ ডিএসসিসি। পার্ক কেন গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে এ প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব মেলেনি ডিএসসিসির কর্তৃপক্ষের কাছে। এ প্রসঙ্গে করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহম্মদ বিলাল গত্বাঁধা বক্তব্যে বলেন, অচিরেই মুক্তাঙ্গন তার ঐতিহ্যের জায়গায় ফিরে আসবে। তিনিও স্বীকার করেন, পার্ক দখল করে গাড়ি ভাড়া দেওয়ার এই ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি ও অবৈধ। বেশ কয়েকবার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলেও আবার তারা দখল করে নেয়। ২০১১ সালে প্রায় স্থায়ীভাবে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিগত দুই যুগ ধরে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের অদূরে এই মুক্তাঙ্গন ছিল পল্টনে সব রাজনৈতিক আন্দোলনের জমায়েতস্থল। জাতীয় রাজনীতিকদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াও এই পার্কে বক্তৃতা করতেন। সেই মুক্তাঙ্গনে ডিএসসিসি ময়লা ফেলার জন্য দুটি ডাস্টবিন স্থাপন করেছে। ডাস্টবিন ঘিরে ছিন্নমূল মানুষের মলমূত্র ত্যাগের ফলে গোটা এলাকা দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে। এ পার্কটির উত্তর পাশের কিছু অংশ ব্যবহার করছে পুলিশ। সামান্য খোলা অংশ এখন আর ব্যবহারের উপযোগী নয়। আবার খানিকটা দক্ষিণ পাশেই গড়ে উঠছে একটি মসজিদ। এ ছাড়াও মসজিদের পাশের কিছু অংশ অবৈধভাবে দখল করে ‘ঢাকা মাইক্রোবাস ও কার মালিক সমিতি’ নামের একটি সংগঠন প্রাইভেটকার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় এই গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা চলে বলে অভিযোগ রয়েছে। ডিএসসিসির কোনো অনুমতি না নিয়ে সংগঠনটি এখানে ব্যবসা করছে। রাজনীতি সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন, মুক্তাঙ্গন পার্কটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে। এই পার্কটির উন্মুক্ত স্থানটিকে বলা যায়, ‘আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার’। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তার ইতিহাস আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের জন্য কলঙ্কজনক। এখান থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন সংগ্রামের ডাক এসেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে নিয়ে ভাবছেনই না। অবিলম্বে এ স্থানটির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানান তারা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে গড়ে ওঠা এই পার্কটি নগরবাসীর ভ্রমণকেন্দ্র হিসেবে অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জিপিওর পশ্চিম কোল ঘেঁষা পার্কটি ’৮০-এর দশকের শেষ দিকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সভা সমাবেশের জন্য ব্যবহার করতে শুরু করে। বিশেষ করে বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর কমসূচি এখানে বেশি হতো। নব্বইয়ের দশকে মুক্তাঙ্গন পার্কে প্রায় প্রতিদিনই সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতো। ২০০০ সালের পর থেকেই পার্কটিতে অবৈধ দখল শুরু হয়। রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ীরা পার্কটির একাংশ দখল করে নেয়। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সভা-সমাবেশের জন্য ব্যবহূত হতো পল্টন ময়দান। মুক্তাঙ্গন সভা সমাবেশের জন্য উপযুক্ত কখনো ছিল না। তবে সরকার পল্টন মাঠ বন্ধ করে দেওয়ার পর বিকল্প হিসেবে এই মুক্তাঙ্গন ব্যবহার করা হতো। এখন সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তাটি ছাড়া রাজধানীতে উন্মুক্ত জায়গায় কথা বলার আর কোনো জায়গা নেই। আমরা সভা-সমাবেশের জন্য পল্টনের বিকল্প একটি জায়গা চাই।

 

সর্বশেষ খবর