শিরোনাম
শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বেহাল সড়ক ঈদ ভোগান্তির আশঙ্কা

পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ৩৪ নির্দেশনা

নিজামুল হক বিপুল

ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশের সড়ক-মহাসড়ককে নিরাপদ ও নির্ঝঞ্ঝাট করতে অন্তত ৩৪টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যা ও ভারি বর্ষণের কারণে সারা দেশে সড়কব্যবস্থার যে দুরবস্থা, তাতে এবারের ঈদযাত্রায়ও হবে ভয়াবহ দুর্ভোগ। এমনটাই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্ত্রণালয় থেকে কাগজপত্রে ঈদের আগেই সব ঠিক করার নির্দেশ দিলেও কতটা বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। কারণ অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আগে-পরে সড়কব্যবস্থা স্বস্তিদায়ক করতে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ২৪ জুলাই মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে অন্তত ৩৪টি নির্দেশনা দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট দফতর, অধিদফতর, বিভাগ, সংস্থা ও কর্তৃপক্ষকে। মন্ত্রণালয়ের ওই সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, কর্তৃপক্ষ, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভার কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, সভায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে। ঈদের অন্তত সাত দিন আগেই সারা দেশের সড়কগুলো প্রয়োজনীয় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি রাজশাহী, বগুড়া, নাটোর, টাঙ্গাইল ঘুরে দেখা গেছে, এ অঞ্চলের সড়ক ও মহাসড়কগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। বিশেষ করে ঢাকা থেকে বের হয়ে চন্দ্রা চৌরাস্তা পার হওয়ার পরই শুরু হয় দুর্ভোগের। টাঙ্গাইল পর্যন্ত যেন এ সড়ক একেবারেই ‘নরকে’ পরিণত হয়েছে। একদিকে সড়কটিতে চার লেনের কাজ চলছে, অন্যদিকে বিদ্যমান সড়ক ভেঙেচুরে একাকার। যমুনা সেতু পার হয়েও সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত এ সড়কের একই অবস্থা। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে বগুড়া পর্যন্ত মহাসড়কটি সরেজমিন পরিদর্শন করে রাস্তা বেহাল দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে নির্দেশনা দিয়েছেন দ্রুত সড়ক মেরামতের। শুধু যে ঢাকা-টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়ক বেহাল তা নয়, একই অবস্থা বগুড়া-নাটোর, নাটোর-রাজশাহী ও বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়কেরও। সরেজমিন দেখা গেছে, এ দুই মহাসড়কের পিচ উঠে গিয়ে স্থানে স্থানে বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে।

ঈদের আগে সারা দেশে সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করে যানবাহন চলা স্বাভাবিক রাখার নির্দেশনা ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের ওই সভায় আরও ৩৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঈদের আগে ও পরে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজট নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব বিভাগীয় কমিশনার, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা হলে দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন দ্রুত সরিয়ে যানজট দূর করা, অস্থায়ী ও ভাসমান বাজার অপসারণ, মহাসড়কের ওপর ধান, পাট, খড়, কাঠ শুকাতে না দেওয়ারও নির্দেশনা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাস টার্মিনাল ও সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই সভার কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগে ও পরে সড়কে সব ধরনের লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন চলা নিয়ন্ত্রণ করা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নসিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইকসহ এ-জাতীয় ছোট ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন যাতে সড়ক-মহাসড়কে চলতে না পারে তা নিশ্চিত করতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যানজটের দুর্ভোগ কমাতে দেশের সব কটি মহাসড়কের সেতুতে টোল প্লাজার সব বুথ চালু রাখা; ঈদের আগে ও পরে মোট ১০ দিন সিএনজি স্টেশন চালু রাখা; ২২টি মহাসড়কে থ্রি হুইলার বন্ধ রাখা; ফেরিসংখ্যা বৃদ্ধি; ঈদের আগের তিন দিন ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান বন্ধ রাখা; জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গরুর হাট না বসানো; কোরবানির পশু ও চামড়া পরিবহন ও বাজারজাতকরণে চাঁদাবাজি বন্ধেও সংশ্লিষ্ট জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর ঈদ এলে ঈদের আগে এ রকম সভা করে নানা পদক্ষেপের কথা বলা হয়, নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ঈদযাত্রা শুরু হতে না হতেই সড়ক-মহাসড়কগুলোয় শুরু হয়ে যায় ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি।

সর্বশেষ খবর