দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান ইপিসি (ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন) কন্ট্রাক্টর হিসেবে কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। গ্যাসভিত্তিক এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৬৩ মেগাওয়াট। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের সিম্পল সাইকেল কেন্দ্র থেকে এরই মধ্যে ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। আর চলতি বছরের ডিসেম্বরেই কম্বাইন্ড সাইকেলের নির্মাণকাজ শেষে অবশিষ্ট ৫৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং দেশি প্রকৌশলীদের নিয়ে এই প্রথমবারের মতো কাজ শুরুর মাত্র ১৭ মাসে সিম্পল সাইকেলে কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেশে ও বিদেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বাংলাদেশ। আর বেসরকারি কোম্পানি, ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের একমাত্র ইপিসি কন্ট্রাক্টর। সম্প্রতি সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে জানা যায়, কেন্দ্রটি ফ্রেম ৯ই গ্যাস টারবাইন দ্বারা পরিচালিত। এজন্য সাড়ে ৪ কি.মি. ২৩০ কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন নির্মাণ করে ফেঞ্চুগঞ্জ সাব স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৯.২৭ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত। আর প্রকল্পের ইপিসি ব্যয় ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটির দায়িত্বপ্রাপ্তদের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের ২২ জুলাই সিম্পল সাইকেল বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। বিদ্যুৎ সঞ্চালনে এই কেন্দ্রে ২৩০ কিলোভল্টের ১৪টি ট্রান্সমিশন লাইন আছে। এর একটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিকল্প ব্যবস্থায় আরেকটি লাইন ছাড়া হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মোংলা বন্দর থেকে জলযানে করে ফ্রান্স, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক ও ভারী যন্ত্রপাতি কুশিয়ারায় আনা হয়। এজন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশেই আলাদা ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মেয়াদকাল ২২ বছর। এখানে পানি রিসাইক্লিং পদ্ধতিতে ব্যবহার হওয়ায় পানির অপচয় কম হয়। আর কেন্দ্রে নির্বাপণ পদ্ধতি থাকায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও কম।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলেন, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি একটি ভিন্নধর্মী কেন্দ্র। এটি গ্যাসভিত্তিক ও কম্বাইন্ড সাইকেল প্রজেক্ট। অর্থাৎ এর সিম্পল সাইকেল থেকে যে উত্তাপ বের হবে তা দিয়ে আরও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এতে জ্বালানি খরচ কমবে এবং কেন্দ্রের সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। এ কাজটি করতে বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় ১০০ বাংলাদেশি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী আছেন। এর বাইরে আমেরিকা, ফ্রান্স, চীন ও ইন্ডিয়ার বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আছেন। যারা স্বল্প সময় বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। এখানে মোট ৭০০ শ্রমিক কাজ করছেন। কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা মেনেই এই কেন্দ্রের কাজ করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালুর আগে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি মনিটরিং দল কেন্দ্রটি পরিদর্শন এবং এর প্রশংসা করে বলে জানালেন কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক এস মাহালিঙ্গম। তিনি বলেন, ‘এত কম সময়ে নির্মাণ করায় সরকারের পাশাপাশি বিদেশি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের কেন্দ্রটি নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।’ ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে এই প্রথম এত কম সময়ে (১৭ মাস) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ করে আমরা জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পেরেছি। এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে উন্মুক্ত গ্যাস ইন্স্যুলেটেড সুইচ ইয়ার্ড (জিআইএস) ও ইন্স্যুলেটেড ফেস বাস ডাক্টের (আইপিবিডি) সমন্বিত প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। এ ছাড়া সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করে, কর্মীদের নিরাপত্তা ও আশপাশের পরিবেশের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি।’ তিনি আশা করেন চলতি বছরের শেষ নাগাদ কম্বাইন্ড সাইকেলের নির্মাণকাজও শেষ করা যাবে।