শিরোনাম
শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

তিনশ বছরের ঝাঁপান খেলা

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

তিনশ বছরের ঝাঁপান খেলা

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামে দিনব্যাপী আয়োজিত ঝাঁপান খেলা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিষধর সাপকে বসে আনা মানুষের কাছে চিরকালই আকর্ষণীয়। তার ওপর যদি একের পর এক প্রদর্শন করা হয় বিষধর সাপের নানা কৌশল তাহলে তো কথাই নেই। এমনই এক ঝাঁপান খেলা (সাপ খেলা) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বৈডাংগা গ্রামে। প্রায় তিনশ বছর ধরে এই গ্রামের বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষ মনসা মঙ্গল পূজা উপলক্ষে আয়োজন করে আসছে এই খেলা। প্রতি বছরের মতো এবারও দুই দিনব্যাপী খেলা গতকাল শেষ হয়েছে। মোট ১০টি দল অংশগ্রহণ করে। বাদ্যের তালে তালে আর বাঁশির সুরে একে একে ঝুড়ি ও হাঁড়ি থেকে বের হয়ে আসে গোখরাসহ বিভিন্ন বিষধর সাপ। মনসা মঙ্গলের পালা গানসহ বিভিন্ন গানের সঙ্গে বাদ্যের তালে সাপুড়েকে নিজে নাচতে হয় আর সঙ্গে ফণা তুলে সাপও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে। সাপুড়ের ইশারায় সাপের এই অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন মানুষকে দেয় অনাবিল আনন্দ। বিভিন্ন এলাকার বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, নারী-পুরুষ, শিশু সবাই উপস্থিত থেকে উপভোগ করেন এ খেলা। আর খেলাকে ঘিরে এখানে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। বসে ছোট আকারের মেলা। ১০ সাপুড়ে দলের অর্ধশতাধিক সাপের মধ্যে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে প্রতিটি সাপ প্রদর্শন করে নিজেদের আকর্ষণীয় কসরত। আর এ দুর্লভ দৃশ্য দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে জীবনে প্রথম আবার অনেকে অনেক দিন পর দেখছেন এ খেলা। এলাকার মেয়ে সুন্দরী দাস জানান, তিনি খেলা দেখতে বাপের বাড়ি বেড়াতে এসেছেন। প্রতিবছর এ ঝাঁপান খেলা আয়োজন করে বাবা-কাকারা। আর সাপ খেলা দেখে তিনি খুবই আনন্দিত। একই ইউনিয়নের মুন্নু জানান, শুধু সাপ খেলাই নয়, হাজার হাজার মানুষ এখানে জড়ো হয়েছে। অনেকের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে। এক কথায় এই সাপ খেলাকে কেন্দ্র করে একটি মিলনমেলা পরিণত হয়েছে। ছাত্র মামুন জানান, মানুষকে আনন্দঘন পরিবেশে রাখতে পারলে সমাজ থেকে অপরাধ কমে আসবে, সমাজের উত্তরোত্তর উন্নতি হবে। তাই বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে এ ধরনের উৎসবের আয়োজন করা উচিত। ঝিনাইদহের উত্তম সাপুড়ে জানান, ছোটবেলা থেকে এই ঝাঁপান খেলা করে আসছি। মানুষকে আনন্দ দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝাঁপান খেলায় অংশ নেন তিনি। এ ব্যাপারে আয়োজক ঝাঁপান খেলা আয়োজক কমিটি ও বৈডাংগা মনসা মন্দির কমিটির সভাপতি প্রেম কুমার জানান, গ্রামবাংলার হারানো এ ঐতিহ্য বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে এ খেলার আয়োজন করেছেন তিনি। এ ছাড়াও সমাজ থেকে সব ধরনের অন্যায় অপরাধ মুছে ফেলে একটি মডেল ইউনিয়ন গড়ার জন্য এ ঝাঁপান খেলার আয়োজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর