শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাটশিল্পে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল

বাজেট থেকে বরাদ্দ চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পাটশিল্পে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল

পাটশিল্পের উন্নয়নে যে দশ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী, সে তহবিল বাজেটে বরাদ্দের মাধ্যমে গঠন করা যেতে পারে বলে মতামত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, তাদের (বাংলাদেশ ব্যাংক) মাধ্যমে এই ঋণ তহবিল গঠন করা হলে বাজারে নগদ টাকার প্রবাহ বেড়ে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতির প্রভাব বাড়বে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদে বড় অঙ্কের ঋণ তহবিল করা হলে সেটি ঘোষিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে না। কিন্তু বাজেট থেকে এ ধরনের তহবিল গঠন হলে তেমন কোনো অসুবিধা হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবু ফরাহ মো. নাছের সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের মতামত সংবলিত চিঠিটি পাঠান। এতে বলা হয়, ‘পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিল’ নামে সরকার কর্তৃক ৯০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। একইভাবে পাটখাত পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখার সম্ভাবনা বিবেচনায় বাজেট থেকে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মতামত পাওয়ার পর গত ১ আগস্ট তহবিল গঠনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়। ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পাটশিল্পের উন্নয়নে এই তহবিল গঠন খুবই জরুরি। এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে ইতিবাচক প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখালেখি হচ্ছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বর্তমানে ২০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) পরিচালিত হচ্ছে। মাত্র ৩ শতাংশ সুদে এই তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে রপ্তানিকারকরা বিদেশ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করেন। রপ্তানি খাতের তৈরি পোশাক, বস্ত্র, চামড়া, সিরামিকসহ বিভিন্ন খাত এ তহবিল থেকে ঋণ সুবিধা পেলেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত পাটশিল্প এই সুবিধা পাচ্ছে না। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ইডিএফ তহবিল থেকে মূলত ঋণ দেওয়া হয় বিদেশ থেকে ডলারে রপ্তানিজাত পণ্যের কাঁচামাল কেনার জন্য। বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণপত্র খোলার পর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৈদেশিক মুদ্রায় এই ঋণ জোগান দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু পাটপণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অর্থাৎ কাঁচাপাট সংগ্রহ করা হয় স্থানীয়ভাবে কৃষকদের কাছ থেকে। এজন্য প্রয়োজন স্থানীয় মুদ্রার। সে কারণে ইডিএফ তহবিল থেকে ঋণ পায় না পাট শিল্প। সাধারণ প্রক্রিয়ায় ব্যাংক ঋণ নিলে ১২ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করতে হয়। অথচ ইডিএফ তহবিল থেকে ঋণ পাওয়া যায় মাত্র ৩ শতাংশ সুদে। গত মার্চে প্রথমবারের মতো জাতীয় পাট দিবস পালনের কর্মসূচিতে পাটপণ্য মেলা উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ বিষয়ে অবহিত করেন প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ইডিএফের বিকল্প হিসেবে এ তহবিলের বিষয়ে সম্মতি দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব শিল্প রপ্তানির বিপরীতে কাঁচামাল আমদানিতে ঋণ সুবিধা পেলে পাট কেন পাবে না। দ্রুত এ বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এই তহবিল গঠনে নীতিগত অনুমোদন চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি লিখে। ওই চিঠিতে বলা হয়, কৃষকদের উৎপাদিত কাঁচাপাট কিনে পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করা হয়। রপ্তানিপণ্য হওয়া সত্ত্বেও কাঁচামাল আমদানি না করায় ইডিএফ থেকে ঋণ সহায়তা পান না পাটশিল্পের উদ্যোক্তারা। পাটশিল্পের পুনরুজ্জীবন, আধুনিকায়ন ও উন্নতমানের পাটজাত পণ্য তৈরি ও রপ্তানির মাধ্যমে জাতীয় আয় বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন রয়েছে। পাটপণ্য রপ্তানিতে শতভাগ মূল্য সংযোজন হয়ে থাকে। দেশে-বিদেশে পাটপণ্যের চাহিদা ও ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দেশে ১৭ পণ্যে পাটের মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক আইন করায় দেশেও পাটের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। পরিবেশবান্ধব এ শিল্পে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বর্তমানে ৪ কোটি মানুষ সম্পৃক্ত রয়েছেন। আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিদেশি মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এ খাতে নতুন নতুন শিল্প হচ্ছে। এসব বিবেচনায় পাট খাতকে সহযোগিতায় ইডিএফের আদলে ২ শতাংশ সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার বিকল্প একটি স্থানীয় মুদ্রা তহবিল গঠন প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর