শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

অনিশ্চয়তায় সাড়ে চার হাজার হজযাত্রী

কাল শেষ হচ্ছে ভিসা আবেদন জমা

মোস্তফা কাজল

এখনো অনিশ্চয়তায় সাড়ে চার হাজার হজযাত্রী। এসব হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। আগামীকাল শেষ হচ্ছে ভিসা আবেদন জমার কার্যক্রম। বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর ঢিলেমি এবং শেষ সময়ে হজ ফ্লাইটে পাঠানোর আশায় অনেক হজযাত্রীর টিকিট ক্রয় করা হচ্ছে না। হজ ফ্লাইটের টিকিট ও পাসপোর্ট হাতে না পেয়ে চরম হতাশায় দিন কাটছে এসব হজযাত্রীর। গতকাল পর্যন্ত চার হাজার ৭৭৬ জন হাজীর ভিসা হয়নি। পাশাপাশি গতকাল পর্যন্ত ৭৫ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। ভিসা ও টিকিট নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ৪৭ হাজার হজযাত্রী। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভিসা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৪২২ জনের। হজ অফিস ও হাব বলছে, আজ অবশিষ্ট হজযাত্রীর ভিসা হয়ে যেতে পারে। নইলে নতুন করে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানা গেছে। হজ এজেন্সির নিয়োগকৃত গ্রুপ লিডারদের প্রতারণার কারণেও বহু যাত্রীর টিকিট কেনা এখনো শেষ হয়নি। অপেক্ষমাণ হজযাত্রীরা আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়ি ও হজক্যাম্পে অবস্থান করে চরম হতাশা ও উৎকণ্ঠায় ভুগছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস জেদ্দার সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গতকাল পর্যন্ত ২১টি বাতিল হজ ফ্লাইটের শ্লট বরাদ্দ পেয়েছে। গতকাল রাতের ফ্লাইটটি আজ দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা ছাড়বে। এসব হজ ফ্লাইটে বাতিল হওয়া হজ ফ্লাইটের প্রয়োজনীয় সংখ্যক হজযাত্রী পাঠানো গেলে জটিলতা ও দুর্ভোগ কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিমান সুষ্ঠুভাবে হজযাত্রী পরিবহনের জন্য মালয়েশিয়া থেকে দুটি এয়ারক্রাফট লিজে ভাড়ায় এনেছে। ২৫  জুলাই থেকে একটি এয়ারক্রাফট নিয়মিত হজযাত্রী পরিবহন করছে। লিজে ভাড়া করা অন্য এয়ারক্রাফট আজ রাত থেকে বাতিল হওয়া ফ্লাইটের হজযাত্রী পরিবহন করবে। হজ অফিস সূত্র জানিয়েছে, বিমান বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারলাইনসের বাতিল ফ্লাইটের এখনো প্রায় ১০ হাজার হজযাত্রী আটকা পড়েছেন। কিছু যাত্রীকে কয়েক দিন আগে পাঠানো হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ঢাকার সৌদি দূতাবাস কর্তৃপক্ষ কাল পর্যন্ত হজ ভিসা ইস্যুর মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি হজ ভিসা ইস্যুর মেয়াদ আরও এক-দুই দিন বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে। হাবের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকালে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের বাসভবনে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় আরও ৫% হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। হাব নেতৃবৃন্দ সব হজযাত্রীর (কোটার মধ্যে) রিপ্লেসমেন্ট দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এর আগে দুই দফায় ১০% হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুই শতাধিক হজ এজেন্সির মালিক-প্রতিনিধিরা প্রয়োজনীয় হজযাত্রীর রিপ্লেসমেন্ট না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে হজক্যাম্পে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হাব মহাসচিব মো. শাহাদাত হোসাইন তসলিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একের পর এক হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়া উদ্বেগের বিষয়। হজযাত্রী প্রেরণের শেষ দিকে কোনো হজ ফ্লাইট যাতে খালি না যায় সে ব্যাপারে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। গত ২৪ জুলাই বিমানের হজ ফ্লাইট শুরুর পর থেকে ই-ভিসা জটিলতা আর যাত্রী সংকটের কারণে একের পর এক বাতিল হতে থাকে বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনসের হজ ফ্লাইট। বিমানের বাতিল হয়েছে ২৫টি এবং সাউদিয়া এয়ারলাইনসের চারটি ফ্লাইট। বাতিল হওয়া এসব ফ্লাইটে সাড়ে ১০ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রার প্রথম ফ্লাইট পৌঁছে ২৪ জুলাই। শেষ ফ্লাইট যাবে ২৮ আগস্ট। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ৬ সেপ্টেম্বর ও শেষ ফিরতি ফ্লাইট ৫ অক্টোবর। গতকাল পর্যন্ত প্লানেট ইন্টারন্যাশনালের (লাইসেন্স নং-১১০২) নীলফামারীর ডোমারের হজযাত্রী মমতাজ আলী, হেলাল উদ্দিন ও জহির উদ্দিনের হজ ভিসা এখনো সম্পন্ন হয়নি। নীলফামারীর ডোমার গ্রুপ লিডার রুহুল আমিনের মাধ্যমে উল্লিখিত তিনজনসহ ১৪ জন হজযাত্রীর এখনো হজ ভিসা করা সম্ভব হয়নি। গতকাল তাদের মোফা আনার জন্য কার্যক্রম শুরু করার কথা জানান নারিতা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের পরিচালক আবদুল মান্নান। গ্রুপ লিডার রুহুল আমিন এসব হজযাত্রীর হজ প্যাকেজের টাকা নিয়ে হজ এজেন্সিতে পরিশোধ না করায় এখনো তাদের হজে যাওয়া সম্ভব হয়নি। আবদুল মান্নান জানান, তাদের এখনো ২৮ জন হজযাত্রীর ভিসা করা সম্ভব হয়নি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস জেদ্দার সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ পর্যন্ত ২১টি শ্লট বরাদ্দ পেয়েছে। এর মধ্যে যাত্রী সংকটের দরুন ৭টি শ্লট ব্যবহার করতে পারেনি।

সর্বশেষ খবর