রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

উপচে পড়া ভিড় কমলাপুরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

উপচে পড়া ভিড় কমলাপুরে

বন্যা ও সড়কের বেহাল দশার কারণে ট্রেনে ঈদের টিকিটে মানুষের চাহিদা বেশি। সে কারণে গত দুই দিন কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ঘরমুখো মানুষের ভিড়ের মধ্যে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ঈদ মানে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা। আর বাড়ি ফেরা মানে আগের রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনে যাওয়ার আগাম টিকিট কাটা। কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কারও কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেয়ে মুখে বিজয়ের হাসি, কারও ব্যর্থ হয়ে খালি হাতে ফেরা। ঈদের আগাম টিকিট বিক্রির পুরনো এ দৃশ্য আবারও দেখা গেল শুক্রবার ও গতকাল শনিবার।

সকাল ৮টায় কমলাপুর রেলস্টেশনের ২৩টি কাউন্টার থেকে ২৮ আগস্টের টিকিট বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে দুটি কাউন্টার ছিল নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য। গতকাল ভোর থেকেই ভিড় করেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি কমার পরই সড়কগুলোর বেহাল চিত্র দেখা গেছে, যে কারণে এবারের ঈদে যাত্রীসাধারণের চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্টেশনের কর্মকর্তারা। ভিড় বাড়া প্রসঙ্গে টিকিটপ্রত্যাশীদের বক্তব্যও ছিল একই সুরে। তারা জানান, বন্যায় সড়কের অবস্থা খারাপ থাকায় দুর্ভোগের আশঙ্কায় বেশির ভাগ মানুষই এবার ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাউন্টার থেকে কেনা যাবে টিকিট। আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে নির্ধারিত মূল্যে টিকিট কিনছেন বলে জানান কমলাপুরে আসা একাধিক যাত্রী। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, আজ রবিবার, আগামীকাল সোমবার ও পরশু মঙ্গলবার যথাক্রমে ২৯, ৩০ ও সর্বশেষ ৩১ আগস্টের টিকিট পাওয়া যাবে। প্রতিদিন প্রায় ২৩ হাজার অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়। টিকিট নেওয়ার পর যাত্রার সময় পরিবর্তন করা যাবে না। আর একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ঈদের বিশেষ ট্রেনের ২ হাজার ৬০৬টি টিকিটও কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হয়। সকালে টিকিট বিক্রি শুরুর আগে থেকেই রেলস্টেশনে কাউন্টারগুলোর সামনে ছিল দীর্ঘ সারি। কাউন্টারগুলো খোলার সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে ওঠেন সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো লোকজন। টিকিটের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের সারি টার্মিনাল ভবন ছাড়িয়ে স্টেশনের প্রবেশপথ পর্যন্ত চলে যায়। দীর্ঘ লাইনে থেকে টিকিট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের অনেককে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তবে উত্তরাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট কাউন্টারের সামনে শুক্রবার দুপুর থেকেই লোকজন ভিড় করেন বলে জানান নিরাপত্তাকর্মীরা। রংপুরের বাসিন্দা শরিফুল সোহাগ জানান, ভোর সাড়ে ৪টা থেকে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কাউন্টার খোলার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর এক্সপ্রেসের টিকিট পান তিনি। শুক্রবার পর্যন্ত বাসে যাওয়ার কথা থাকলেও ভোগান্তির আশঙ্কায় তিনি সিদ্ধান্ত বদল করেছেন। কাওসার নামে পার্বতীপুরের এক টিকিটপ্রত্যাশী বলেন, এখন বন্যা কমছে। রাস্তার বেহাল দশা। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই ১০টার গাড়ি ছাড়ে ২টায়। পৌঁছায় নির্দিষ্ট সময়ের সাত-আট ঘণ্টা পর। এখন বন্যার কারণে বাস কখন ছাড়বে, কখন পৌঁছাবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তাই এবার ট্রেনই ভরসা। ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার জানান, ভিড় বেশি হলেও আইনশৃঙ্খলার সামগ্রিক পরিবেশ সুষ্ঠু ছিল। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা কালোবাজারির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। স্টেশন চত্বরে সার্বক্ষণিক সাদা পোশাকে পুলিশ টহল দেয়। কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, প্রত্যেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনছেন। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এমনকি বাড়তি চাপ সামলাতেও রেলওয়ে প্রস্তুত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর