শিরোনাম
রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

সমুদ্রসম্পদ অনুসন্ধান জোরদার কার্যক্রম

কাজ করছে আরভি মীন, কেনা হচ্ছে আরেকটি জাহাজ

জিন্নাতুন নূর

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বঙ্গোপসাগর নিয়ে বাংলাদেশের বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। এই সময়ে বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। মূল্যবান এই সম্পদ আহরণে বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগ ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। এরই মধ্যে সাগরে মত্স্য সম্পদ অনুসন্ধানে ‘আরভি মীন সন্ধানী’ জরিপ জাহাজ তার কার্যক্রম শুরু করেছে। এর বাইরে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য আরেকটি সার্ভে ভেসেল ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা। সংশ্লিষ্ট খাতে জনবল তৈরির লক্ষ্যে নতুন কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে সরকার। সমুদ্র সীমায় সম্পদ আহরণের জন্য দক্ষ জনবলের প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছে। এটা বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে আগের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতিরই লক্ষণ।

মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সমুদ্রের মাছ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে একটি জরিপ জাহাজ ক্রয় করেছে। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও মালয়েশিয়ার যৌথ অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং’ প্রকল্পের আওতায় এটি ক্রয় করা হয়। ‘আরভি মীন সন্ধানী’ নামের জরিপ জাহাজে ২৮ জন ক্রু ও গবেষক কাজ করতে পারবেন। ৬৫ কোটি টাকায় কেনা এই জাহাজ দেশের সমুদ্র সীমায় কী পরিমাণ ও কোন প্রজাতির মাছ আছে তা অনুসন্ধান করছে। এর ফলে ত্রিশ বছর পর দেশের সমুদ্রে আবারও মাছ জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। এটি সাগরে আগামী ২০ থেকে ২৫ বছর অনুসন্ধান অব্যাহত রাখবে। এ ছাড়াও সরকার নিজস্ব জাহাজের পাশাপাশি ভাড়ায় জাহাজ সংগ্রহের পদক্ষেপ নিয়েছে। এমনকি দেশের সমুদ্রসীমায় বিদেশি ট্রলার, জাহাজের অননুমোদিত ফিশিং ও অনুপ্রবেশ বন্ধে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এমনকি সমুদ্রসীমায় মত্স্য সম্পদ আহরণে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই বিদেশে ১০ জন ও দেশে ৯৯০ জন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এর বাইরে সমুদ্রের গভীরে সম্পদ অনুসন্ধানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা প্রায় হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে একটি জরিপ ও গবেষণা জাহাজ ক্রয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পেট্রোবাংলার পরিচালক জামিল এ আলম জানান, এ লক্ষ্যে সাগরে অনুসন্ধান, ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজের লক্ষ্যে জাহাজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে (ইওআই) আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই জাহাজটি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি বিশেষ আইনের আওতায় অধিগ্রহণ করা হবে। এর ফলে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই জাহাজটি ক্রয় সম্ভব হবে। মূলত গত তিন বছর ধরে চেষ্টা করেও আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানকে সমুদ্রের হাইড্রোকার্বন সংক্রান্ত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়। এরপর পেট্রোবাংলা এই জাহাজ ক্রয়ের উদ্যোগ নেয়। তবে এই ধরনের আধুনিক জাহাজ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশে দক্ষ জনবল নেই। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা জনবল তৈরির ওপরও জোর দিয়েছেন।

অন্যদিকে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে দক্ষ জনবল তৈরির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজিতে সমুদ্র বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি দেশের সরকার নিয়ন্ত্রিত দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েও ইতিমধ্যে সমুদ্রবিদ্যা বিভাগ খোলা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি নামে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারেও মেরিন ফিশারিজ ইনস্টিটিউট স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এমনকি বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশের সামুদ্রিক অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য আগ্রহী। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য এরই মধ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল গঠন করেছে। বিশ্বব্যাংক একই সঙ্গে বাংলাদেশকে বঙ্গোপসাগরের ব্লু ইকোনমির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রকল্পের অধীনে সমুদ্রের তলদেশে গবেষণার জন্য ৯৯ মিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য দিয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সামুদ্রিক সম্পদ অনুসন্ধানে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিডিংয়ের জন্য যা প্রয়োজন তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য সরকার সিসমিক সার্ভে কার্যক্রমে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণের জন্য আবারও দরপত্র আহ্বান করেছে। এর মূল্যায়ন কার্যক্রম শেষ হলেও স্বাক্ষরের কার্যক্রম বাকি আছে। আর বাপেক্স যে এলাকায় অনুসন্ধান করছে সেগুলো রেখে বাকি এলাকার জন্য আমরা বিডিং-এ চলে যাচ্ছি। যদি তারা গ্যাস পায় তবে আমাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি বিশেষ আইনের আওতায় গভীর সমুদ্র অঞ্চলে ব্লক ১২, ১৬ ও ২১ হতে তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ চলছে। এ ছাড়া সমুদ্রসীমা অর্জনের ফলে অফশোর এলাকায় নতুন বিডিং রাউন্ড আহ্বানের জন্য সময় উপযোগী মডেল পিএসসি ২০১৫-এর সংশোধনের খসড়া এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।

সর্বশেষ খবর