সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকাকে সঙ্গে নিয়ে দিল্লির সুন্দরবন বাঁচাও অভিযান

নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

ঢাকাকে সঙ্গে নিয়ে দিল্লির সুন্দরবন বাঁচাও অভিযান

তিস্তা এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে শোরগোলের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে দুয়োরানী হয়ে ছিল সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার প্রকল্পটি। ছয় বছর আগে এই নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ চুক্তিপত্রে সইটুকুই শুধু হয়েছে। অথচ উপগ্রহচিত্রে স্পষ্ট, ঘনবনাঞ্চলের মাঝে যেন ‘টাক’ ক্রমবর্ধমান। সরকারি সূত্রের খবর, এবার ঢাকা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাশে নিয়ে সুন্দরবন বাঁচাও অভিযানে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করতে কেন্দ্রের তরফ থেকে বলা হয়েছিল ‘অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ (ওআরএফ)-কে। তারা দুই দিন আগে কেন্দ্রকে সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এই রিপোর্টের প্রস্তাবগুলোকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে কাজ শুরু করে দিতে চাইছে কেন্দ্র। ঢাকার সঙ্গেও শিগগিরই আলোচনা শুরু হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। রিপোর্টে যে বিষয়গুলোকে দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদীমাত্রা বৃদ্ধি, মিষ্টি জলের সরবরাহ অবাধ করা, স্যালিনিটি ম্যানেজমেন্ট, ভূবৈচিত্র্যের মানচিত্র তৈরির মতো বিষয়গুলো। দুই দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়া এই বিষয়ক যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি কার্যত অচল হয়ে রয়েছে। তাতে নতুন করে অক্সিজেন জোগানের জন্য জোর দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা মোকাবিলার জন্য একটি পরামর্শদাতা কমিটি গঠন করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যারা ওয়ার্কিং কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলবে। তাতে থাকবেন বিশেষজ্ঞরা। গত কয়েক বছরে উপগ্রহের মাধ্যমে জলাভূমির ছবি পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, সুন্দরবনের পশ্চিম অংশ দিয়ে যে সব নদী আগে সাগরে মিশত, সেগুলোর অধিকাংশ হয় বন্ধ হয়ে গেছে, নয়তো সেগুলোর জল ধারণ ক্ষমতা এতই কমে গেছে যে বদ্বীপের মাটি তাতে তেমন ভিজছে না। বদ্বীপের মাঝখানটায় মিষ্টি জল পৌঁছাচ্ছে না। সমুদ্রের জোয়ারভাটার জন্য নোনা জল ভেজাচ্ছে পুরো বনাঞ্চলই। ধীরে ধীরে সুন্দরবনের পশ্চিম দিকের জঙ্গলে নুনের ভাগ অত্যন্ত বেড়ে গেছে। আর তাতেই সুন্দরী গাছের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। মিষ্টি জলের সরবরাহ না বাড়ালে এই গাছ আর বাঁচানো যাবে না, এমনটাই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। যা গোটা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেবে।

উপগ্রহ থেকে সুন্দরবনের পশ্চিম দিকের (পশ্চিমবঙ্গের দিকটা) যে ছবি রাজ্য বন দফতরের রিমোট সেন্সিং বিভাগ তুলেছিল তাতে দেখা গিয়েছিল— চারদিকে ঘন বনাঞ্চল, মাঝখানটা ফাঁকা, যেন টাক পড়ে গিয়েছে। সুন্দরবনের শতকরা ২৫ ভাগ পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। বাকি ৭৫ ভাগ রয়েছে বাংলাদেশে। দেখা যাচ্ছে ও পারের সুন্দরবনে গত কয়েক বছরে সুন্দরী গাছ কমেছে শতকরা ৭৬ ভাগ, গেঁয়ো গাছ কমেছে শতকরা ৮০ ভাগ। সমস্যাটা এ-দিকের মতোই। বালেশ্বর, পাসুর ছাড়া আর যে সব নদী সুন্দরবনে মিষ্টি জল সরবরাহ করত সেগুলোর উত্সমুখ আটকে গিয়েছে, কিংবা অন্য কোনো কারণে তারা মিষ্টি জলের সরবরাহ পাচ্ছে না। এদের মধ্যে কারও সরাসরি যোগাযোগ ছিল মেঘনার সঙ্গে, কারও বা ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে। সত্তরের দশকে ফারাক্কা ব্যারেজ তৈরি হওয়ায় সুখা মরসুমে গঙ্গা দিয়ে আসা জলের প্রবাহ অনেকটাই কমে আসছে। তাই সুন্দরবনে যথেষ্ট মিষ্টি জল নিয়ে যেতে পারছে না বালেশ্বর, পাসুররা।

সর্বশেষ খবর