মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

তারপরও ট্রেনের টিকিটের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা ও চট্টগ্রাম

একদিকে বন্যার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক প্রায়। অন্যদিকে টিকিট পাওয়ার নেই কোনো নিশ্চয়তা। তবুও যেন যাত্রীদের শেষ ভরসা ট্রেন। অনিশ্চিত যাত্রাতেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছেন টিকিটের জন্য। সেটি যেমনি হোক নির্ধারিত গন্তব্যের ট্রেনে উঠতে পারলেই হলো। আগাম টিকিট বিক্রির চতুর্থ দিনে এমন দৃশ্য ছিল রাজধানীর কমলাপুরে। গতকাল ঈদে ঘরে ফেরার জন্য আগামী ৩০ আগস্টের টিকিট পেতে  কাউন্টারের সামনে মানুষের তিল ধারণের জায়গা ছিল না। অনেকে সিট না পেয়ে দাঁড়ানোর টিকিট নিয়েই ফিরে গেছেন।  রবিবার টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পৌলি রেলসেতুর একটি পিলার দেবে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন চলাচল। রেলওয়ে সূত্র জানায়, এই সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের একতা, ধুমকেতু, সুন্দরবন, নীলসাগর, রংপুর এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি, লালমণি, পদ্মা, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও মৈত্রী এক্সপ্রেসসহ আটটি ট্রেন চলাচল করে। ওই সেতুর এক পাশের মাটি সরে যাওয়ায় পিলার দেবে যায়। এ সমস্যার কারণে প্রায় পাঁচ হাজার টিকিট বাতিল হয়। যারা আগে টিকিট কেটেছিল তাদেরও টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। গতকাল রেলওয়ের সহকারী পরিচালক সায়েদুর রহমান জানান, বিকাল ৪টার দিকে সেতুটি মেরামত করা হয় এবং ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।  

তবুও গত তিনদিনের তুলনায় গতকাল আগাম টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় বেশি ছিল। কাউন্টারের সামনে থেকে দীর্ঘ লাইন এঁকেবেঁকে সিঁড়ি পেরিয়ে বাইরে স্টেশনের প্রবেশ পথে চলে যায়। বেশিরভাগই টিকিটের জন্য রবিবার রাত থেকে লাইনে দাঁড়ায়। কেউ কেউ এসেছেন ভোর বেলায়। আর লাইনের প্রথম দিকে যারা ছিলেন তারা প্রত্যাশিত টিকিট পেয়ে ছিলেন আনন্দিত, উচ্ছ্বাসিত। যেন সোনার হরিণ পেয়েছেন। লাইনের একটু পেছনের দিকে যারা ছিলেন তারা শেষ পর্যন্ত টিকিট পাবেন কিনা সেই শঙ্কাও ছিল চোখে-মুখে। স্টেশনের ২৩টি কাউন্টারের প্রতিটিতে ছিল লম্বা সারি। কাউন্টার কর্মকর্তারা জানান, টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় গত তিনদিনের তুলনায় বেশি। তবে কাল (মঙ্গলবার) সবচেয়ে বেশি ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চিত্রা এক্সপ্রেসের টিকিটপ্রত্যাশী শফিকুল ইসলাম জানান, রাত ১০টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখনো কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। সামনের দিকে যারা ছিল তাদের অনেকে প্রত্যাশিত এসি টিকিট পাননি। সকাল ৮টা থেকে টিকিট ছাড়ার ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেক যাত্রীকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সবুজ নামে এদের একজন জানান, টিকিট পেতে প্রতিবারই ভোগান্তি পোহাতে হয়। যেন এর কোনো সমাধান নেই। প্রয়োজনীয় কাজ ছেড়ে লাইনে দাঁড়িয়েও শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত টিকিট পাইনি। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, আগাম টিকিট বিক্রির জন্য চতুর্থ দিনে প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার টিকিট রাখা হয়েছে। সীমাবদ্ধতার জন্য লাইনে দাঁড়ানো সবাইকে টিকিট দেওয়া সম্ভব হবে না।  

দ্রুতযান এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য রবিবার দুপুর থেকে কয়েকজনকে নিয়ে কাউন্টারের সামনে লাইন দেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পুসিদার রহমান লিটন। অপেক্ষমাণদের লাইনে তিনি ছিলেন সবার আগে। তিনি ২৮ ঘণ্টা অপেক্ষার পর টিকিট পান। লিটনের পেছনে ছিলেন রাজু নামে আরেকজন। তিনি জানান, রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব খারাপ, এ কারণে ট্রেনে যেতে চায় সবাই। অপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

তাদেরই লাইনের একটু দূরে ছিলেন মফিজুল নামে আরেক যাত্রী। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ভোর থেকে অপেক্ষা করছেন টিকিটের জন্য। টিকিট পাবেন কি পাবেন না তা আল্লাহই ভালো জানেন। ট্রেনের চেয়ার কোচের টিকিট না পেলেও দাঁড়িয়ে থাকার টিকিট কেটে চলে যাব। দেড় বছরের ছেলে আলিফ আর ননদকে নিয়ে রবিবার রাত ৮টা থেকে নারীদের কাউন্টারের সামনে ছিলেন এলিফ্যান্ট রোডের বাসিন্দা রহিমা বানু। গতকাল সকালে তিনি জামালপুর যাওয়ার তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের চারটি এসি টিকিট কিনেন। 

ঈদে পশ্চিম রেলে যোগ  হচ্ছে আরও ৭৫ কোচ : ঈদে পশ্চিম রেলে আরও ৭৫টি যাত্রী কোচ যোগ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাত্রীদের সুবিধা বিবেচনায় শোলাকিয়াসহ ৫টি স্পেশাল ট্রেন এবং ৭৫টি কোচ মেরামত শেষে অতিরিক্ত সংযোজন করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সূত্রটি আরও জানিয়েছে, এরই মধ্যে ৫২টি কোচ ওয়ার্কশপ থেকে মেরামত শেষে সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি কোচগুলো ৩০ আগস্টের মধ্যে মেরামত শেষে সরবরাহ করা হবে। রেল পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী আবদুল হাই বলেন, কোরবানির ঈদে নিরাপদে ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি রেল প্রশাসনের বিশেষ নজরদারি রয়েছে সার্বক্ষণিক। গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন মনিটরিং সেল। পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, গতকাল চতুর্থ দিনে টিকিটের চাহিদা ছিল অনেক বেশি। যাত্রীরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিয়েছেন। সোনার বাংলা ও বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে দুপুরের মধ্যেই। আজ মঙ্গলবারও টিকিটের জন্য ভিড় থাকতে পারে। ৪র্থ দিনে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট নিতে আশা একটি কোম্পানির কর্মকর্তা জহির উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ লাইন ধরে আছি সেই সকাল থেকেই। বেলা ১১টার দিকে কাউন্টারে গিয়ে টিকিট চাইতেই পেলাম সেই কাঙ্ক্ষিত টিকিট। পরিবার নিয়ে বাড়ি গিয়ে কোরবানি করতে পারব। তবে ঈদের সময় কাউন্টার আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট ২৭, ১৯ আগস্ট ২৮ এবং ২০ আগস্ট ২৯ আগস্টের টিকিট দেওয়া হয়েছে। ২২ তারিখ দেওয়া হবে ৩১ আগস্টের টিকিট। ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ২৫ আগস্ট থেকে।

সুবর্ণ এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল ৭টায়, মহানগর গোধূলী বিকাল ৩টায়, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল সোয়া ৮টায়, মহানগর এক্সপ্রেস বেলা সাড়ে ১২টায়, সোনার বাংলা বিকাল ৫টায় এবং তূর্ণা এক্সপ্রেস রাত ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাবে। পাহাড়িকা সকাল সোয়া ৯টায়, উদয়ন এক্সপ্রেস রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে সিলেটের উদ্দেশে, মেঘনা এক্সপ্রেস বিকাল সোয়া ৫টায় চাঁদপুরের উদ্দেশে এবং বিজয় এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ময়মনসিংহের উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবে। কর্ণফুলী এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ও ঢাকা মেইল এক্সপ্রেস রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকার উদ্দেশে, সাগরিকা এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৭টায় চাঁদপুরের উদ্দেশে, ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস বিকাল সাড়ে ৩টায় বাহাদুরাবাদের উদ্দেশে ও জালালাবাদ এক্সপ্রেস রাত সাড়ে ৯টায় সিলেটের উদ্দেশে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাবে। পরিবহন সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ঈদের তিন দিন আগে থেকে কনটেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া কোনো পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সুষ্ঠুভাবে ও নিরাপদে ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ট্রেন সম্পৃক্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আগামী ২৮ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর