বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট

তিন তালাক অসাংবিধানিক

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মুসলিমদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের রাস্তা হিসেবে তিন তালাক প্রথা ‘অসাংবিধানিক’, ‘খামখেয়ালি’ এবং ‘ইসলামের অংশ নয়’ বলে মন্তব্য করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এই ধরনের প্রথা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলেও জানিয়েছে দেশটির শীর্ষ আদালত। আদালতের অভিমত তিন তালাক  প্রথার ফলে মুসলিম নারীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, কারণ এই প্রথার ফলে তাদের বিবাহজীবন অবিশ্বাস্যভাবেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য ‘তালাক’ শব্দকে ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরেই দেশ জুড়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। মোদি সরকার চায় তিন তালাক প্রথা তুলে দিতে। একাধিক মুসলিম নারী সংগঠনের তরফেও তিন তালাক নিষিদ্ধ করার দাবি তোলা হয়। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিল মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড। সরব হয় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও। তিন তালাকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও দায়ের করা হয় শীর্ষ আদালতে। সংবিধান অনুসারে ‘তিন তালাক’ প্রথা বৈধ কি না তা নিয়ে গত ১১ মে ঐতিহাসিক শুনানি শুরু হয় ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে । সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৫ জন ভিন্ন ধর্মের বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে শুরু হয় শুনানি পর্ব। প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর (শিখ) ছাড়াও এই বেঞ্চে ছিলেন ক্যুরিয়ান জোসেফ (খ্রিষ্টান), আর এফ নারিম্যান (পার্সি), ইউ.ইউ ললিত (হিন্দু) এবং আব্দুল নাজির (মুসলিম)।

গরমের ছুটির মধ্যে টানা ছয়দিন শুনানি চলার পর ১৮ মে এই মামলার রায় সংরক্ষিত রাখে আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ। অবশেষে গতকাল সেই মামলা নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিল শীর্ষ আদালত। শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির মধ্যে তিন বিচারপতিই (রোহিনতন নরিমান, উদয় ললিত এবং যোশেফ ক্যুরিয়ন) তিন তালাক প্রথাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দিয়ে জানায় তিন তালাকের জন্য কোনো সাংবিধানিক সুরক্ষা নেই। এই প্রথা ইসলামের অংশ নয় এবং এই তালাক প্রথা আইনত নিষিদ্ধ ও এতে শরিয়ত অনুমোদনেরও অভাব রয়েছে। তাদের অভিমত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মরক্কো, সৌদি আরবের মতো মুসলিম রাষ্ট্রে তিন তালাক নিষিদ্ধ হলে ভারত কেন তার থেকে মুক্তি পাবে না। যদিও প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর এবং বিচারপতি আবদুল নাজির তিন তালাক প্রথার বৈধতা বহাল রাখার ব্যাপারে মত দেন। তাদের মত ছিল ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হল তিন তালাক। খেহর তার রায়ে তিন তালাক প্রথা নিয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য আগামী ছয় মাসের মধ্যে সংসদে (পার্লামেন্ট) আইন তৈরি করার কথাও বলেন। এ ব্যাপারে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকেই তাদের বিভিন্নতা দূরে সরিয়ে রেখে সরকারকে সাহায্য করার কথাও বলেছে শীর্ষ আদালত। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন আইন না হলে তিন তালাকে স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়বে। সেক্ষেত্রে গতকাল থেকে আগামী ছয় মাস তিন তালাক দেওয়া যাবে না বলেও প্রধান বিচারপতি তার রায়ে জানান। এরপরেও কোনো নারীকে তিন তালাক দেওয়া হলে তারা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন তবে আদালতের দ্বারস্থ হলেও তা খারিজ হয়ে যাবে। এই রায়ের ফলে তিন তালাক প্রথার শিকার হওয়া মুসলিম নারীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। স্বামী তিন তালাক দেওয়ার ১৫ বছর পর ২০১৬ সালেই ওই প্রথার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন শায়রা বানু (৩৫)। শায়রা’র সঙ্গেই তালাক হওয়া আরও চার নারী  আফরীন রহমান, গুলশান পারভীন, ইসরত জাহান এবং আতিয়া সাবরি-এদেরও মামলার আবেদন জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর