বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বন্দরের পণ্যবাহী গাড়িতে লাখ টাকার চাঁদাবাজি!

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য পরিবহনে ব্যবহূত ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে চলছে গণচাঁদাবাজি। যদিও চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন এটিকে পরিবহন শ্রমিকদের নিরাপত্তা খাতের ব্যয় নির্বাহের জন্য করা হচ্ছে বলে দাবি করছে। এ খাতের কথা বলে চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে প্রতি মাসে আদায় করা হয় অর্ধ কোটিরও বেশি টাকা। এদিকে এটিকে চাঁদাবাজি আখ্যা দিয়ে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে পুলিশ। সিএমপির বন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘কোনো সংগঠন কিংবা ব্যক্তির নামে চাঁদা উত্তোলন অপরাধের মধ্যেই পড়ে। যারা এ ধরনের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, ‘সরকার পরিবহন শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই নিজেদের উদ্যোগে শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের বেতন দেওয়ার জন্য ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শ্রমিক ফেডারেশন আমাদের টাকা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। তাই আমরা টাকা উত্তোলন করি।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরে আসা প্রায় দুই হাজার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান থেকে চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নামে আদায় করা হয় চাঁদা। এরমধ্যে প্রতিটি ট্রাক থেকে ৫০ এবং কাভার্ড ভ্যান থেকে আদায় করা হয় ১০০ টাকা। এসব চাঁদা উত্তোলনের জন্য চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের রয়েছে ২০ কর্মচারী। তাদের তদারকি করেন চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটির সাত কর্মকর্তা। কোনো ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানচালক দাবিকৃত চাঁদা না দিলে চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক নেতা বলেন, প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার কাভার্ড ভ্যান এবং ট্রাক থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা হিসেবে গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করা হয়। এ টাকার কিছু অংশ প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় দেয়। বাকি টাকা ইউনিয়নের নেতারা নিজেদের মধ্যে ভাগভাটোয়ারা করেন।  

চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটির সদস্য আবদুল আজিজ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান থেকে টাকা নেওয়াকে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, বন্দরে আসা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান সুরক্ষার জন্য সমিতির পক্ষ থেকে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের একেকজনের দৈনিক বেতন ৬০০ টাকা। এ ধরনের ১৮ জন শ্রমিক দায়িত্ব পালন করেন। তাদের বেতন দেওয়ার জন্য কিছু টাকা উত্তোলন করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ট্রাকচালক বলেন, এখানে গাড়ি নিয়ে এলেই জেলা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে তাদের হাতে লাঞ্ছিত করে। তাই সবাই বাধ্য হয়ে ইউনিয়নকে চাঁদা দেয়।

সর্বশেষ খবর