শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

মামলা না করার শর্ত দিল ফিলিপাইন

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরতে সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মামলা না করার শর্ত দিল ফিলিপাইন

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় এর আগে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক একাধিকবার দায় এড়াতে চাইলেও সম্প্রতি দেশটি জানিয়েছে, তারা অর্থ উদ্ধারে সর্বোচ্চ সহায়তা দেবে। তবে শর্ত, বাংলাদেশ যেন আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা না করে। কারণ মামলা করলে বিষয়টি পুরোপুরি আদালতে ন্যস্ত হবে। তখন ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারবে না।

নিয়ম অনুযায়ী আগামী দেড় বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা না করলে পরবর্তীতে বাংলাদেশ আর মামলা করার সুযোগ পাবে না। ফলে এ সময়ের আগেই রিজার্ভের অর্থ ফেরত এবং হ্যাকারদের সব ধরনের তথ্য জানতে চীন ও ফিলিপাইনের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দেরিতে হলেও বাংলাদেশ অর্থ ফেরত পাবে। আর তদন্ত প্রতিবেদন আপাতত প্রকাশ করা হবে না। ফিলিপাইনকেও প্রতিবেদনের কোনো তথ্য দেওয়া হবে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত বৈঠকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশার কথা, ফিলিপাইন সহায়তা দিতে সম্মত। চীন সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। তাদের কাছেও আমরা সহায়তা চেয়েছি।

আশা করি শিগগিরই একটা ভালো ফল পাওয়া যাবে।’ রিজার্ভের অর্থ উদ্ধার এবং হ্যাকারদের ধরতে চীনকে পাশে চায় বাংলাদেশ। কেননা চীনের দুজন হ্যাকারও এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে একাধিক সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমানের নেতৃত্বে এ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের পর্যালোচনামূলক বৈঠকে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, ফিলিপাইন শুধু মামলা না করার শর্তই দেয়নি; দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আবারও জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে, তাদের ব্যাপারে তথ্য দিতে হবে। বাংলাদেশ অবশ্য তর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়। তদন্ত প্রতিবেদনে কী আছে, তা ফিলিপাইন বা চীন কাউকেই দেওয়া যাবে না। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (ফেড) থেকে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার (৮০০ কোটি টাকা) হাতিয়ে নেয় হ্যাকার চক্র। এর মধ্যে ১৫ মিলিয়ন ডলার বা ১২০ কোটি টাকা ফেরত এসেছে। ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিল, বাকি ৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার কোথায় তার হদিস এখনো পাওয়া যায়নি। ওই অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তবে উদ্ধারের সম্ভাবনা জাগাতে হলে অবশ্যই হ্যাকারদের চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক বা ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) দায়ী কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রাসাদ দেবনাথ বলেন, ‘ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিছু বিষয়ে অগ্রগতি অবশ্যই রয়েছে। তারা সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে মামলা করা না করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।’

সর্বশেষ খবর