রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রধান দুই দলেই প্রার্থীর ছড়াছড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান দুই দলেই প্রার্থীর ছড়াছড়ি

দেড় বছর বাকি থাকলেও ঢাকা-১৪ আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ঢাকার সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মিরপুর, শাহআলী ও দারুসসালাম নিয়ে এ আসন। এ আসনে ডিসিসি উত্তরের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড পড়েছে। সংসদীয়-১৮৭ আসনে লড়াই হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। আওয়ামী লীগ চায় আসনটি ধরে রাখতে। অন্যদিকে বিএনপি চায় হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। তবে দুই দলেই রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। প্রধান দুই দলের বাইরে অন্য কোনো দলের প্রার্থীর তৎপরতা চোখে পড়েনি।

এ আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের আসলামুল হক আসলাম। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তবে তার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সরাসরি নৌকা  নিয়ে ভোট করতে চান যুব মহিলা লীগ উত্তরের সভাপতি সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন। এ ছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগ  সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা মাজহার আনাম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি এবং ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ও সাবেক কমিশনার দেলেয়ার হোসেন।

অন্যদিকে ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপি থেকে চারজন সম্ভাব্য প্রার্থী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন সাবেক এমপি এস এ খালেকের ছেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চতর ডিগ্রিধারী তরুণ নেতা এস এ সিদ্দিক সাজু। এ ছাড়া আরও তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। তারা হলেন মহানগরী উত্তর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা মুন্সী বজলুল বাসিদ আনজু, উত্তর বিএনপির সহসভাপতি সাবেক যুবনেতা রবিউল আউয়াল ও সাবেক কমিশনার মাসুদ খান। এ তিন নেতাও নিজেদের অবস্থান থেকে এলাকায় তৎপরতার পাশাপাশি কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির এস এ খালেককে পরাজিত করে নৌকা নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসলামুল হক আসলাম। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জন করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। গত দুই মেয়াদে আসলাম এ এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। সে কারণে এবারও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন তিনি। আসলাম ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

এ প্রসঙ্গে আসলামুল হক আসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে কে মনোনয়ন পাবেন তা আল্লাহ আর জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ বলতে পারবেন না। মনোনয়ন সবাই চাইতে পারেন। এটা সবার অধিকার। যোগ্যতা আর বিবেচনার মাপকাঠি ঠিক করবে জনগণ, দল আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তবে জননেত্রী আমাকে তৃতীয়বারের মতো নৌকা দিলে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হব ইনশা আল্লাহ।’

এ আসনে আওয়ামী লীগের টিকিটপ্রত্যাশীর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সংরক্ষিত আসনের এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন। তিনি যুব মহিলা লীগ উত্তরের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ এলাকায় রাজনীতিতে সক্রিয়। সংরক্ষিত এমপি হিসেবেও মানুষের পাশে রয়েছেন। এবার সরাসরি নৌকা নিয়ে ভোট করতে চান রাজপথের এই নারী নেত্রী। এ প্রসঙ্গে সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই এ এলাকায় রাজনীতি করি। সব সময় এলাকার জনগণের পাশে আছি। যখন এমপি ছিলাম না তখনো এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছি।’ আরেক প্রার্থী দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা মাজহার আনাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। দলের দুর্দিনে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছি। আমার রাজনৈতিক ত্যাগ ও জনপ্রিয়তার মাপকাঠি বিবেচনায় নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকা দিলে জয় নিয়েই ঘরে ফিরব।’ মহানগরী আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরাসহ নানা কাজ করে যাচ্ছি। এ আসন থেকে আমি নৌকা পেতে চাই। এখানকার তৃণমূল আওয়ামী লীগের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে আমার পক্ষে।’ ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ছিলেন এস এ খালেক। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের আসলামুল হক আসলামের কাছে পরাজিত হন। এর আগে বিএনপির ৮৭ বছর বয়সী এই প্রবীণ নেতা একাধারে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পঞ্চম জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে নিজের বড় ছেলে সৈয়দ মোহাম্মদ মহসীন নির্বাচিত হন। এখন তিনি কানাডাপ্রবাসী। একাধিকবার তিনি ওই আসনে এমপিও হয়েছেন। বার্ধক্যের কারণে আগামীতে আর নির্বাচন না করার সম্ভাবনাই বেশি এস এ খালেকের। বিদেশ যাওয়ার আগে নিজের ছেলে এস এ সিদ্দিক সাজুকে নিয়ে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই সাজু পুরোদমে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ২১টি রাজনৈতিক মামলার আসামি বিএনপির এই তরুণ নেতা। সবকিছু ঠিক থাকলে এস এ সিদ্দিক সাজুই খালেক পরিবারের পক্ষ থেকে দলের মনোনয়ন চাইবেন। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়া বিএনপির এই তরুণ নেতা এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেছেন। বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে তার নামে পোস্টার-ব্যানারও শোভা পাচ্ছে মিরপুর, শাহআলী ও দারুসসালামের অলিগলিতে। এর বাইরেও আরও তিন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে বিএনপির। এ প্রসঙ্গে এস এ সিদ্দিক সাজু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার বাবা দীর্ঘদিন এলাকায় নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। তার অনুমতি নিয়েই আমি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনটি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দিতে পারব ইনশা আল্লাহ।’

এদিকে মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আউয়াল বলেন, ‘দল ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচিই আমি সফলতার সঙ্গে পালন করেছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি আমি বিএনপিকে উপহার দিতে পারব বলে আশা করছি।’

সর্বশেষ খবর