সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

পানি কমলেও ভাঙন অব্যাহত

প্রতিদিন ডেস্ক

দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো নদীভাঙন চলছেই। এদিকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বন্যায় ধ্বংসযজ্ঞের বীভৎস দৃশ্য বেরিয়ে আসছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব স্মরণকালের সব হিসাবকে ম্লান করে দিচ্ছে বলে ওয়াকিবহালরা জানাচ্ছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— নাটোর : নলডাঙ্গা উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে শুরু করেছে। কয়েকদিনে বারনই নদীর ও হালতি বিলের পানি ১২-১৫ সেন্টিমিটার কমলেও বন্যাদুর্গতদের দুর্ভোগ কমেনি। বাঁশিলা গুচ্ছগ্রামে বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি ঢুকে ৩০ পরিবারে সীমাহীন দুর্ভোগ চলছে। গুচ্ছগ্রামে এখন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে। গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী সুমি আক্তার, রুপালি বেগম, জয়নব খাতুন জানান, বন্যার পানিতে সব এলাকা ডুবে যাওয়ায় তাদের স্বামীদের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের খাবার দিতে পারা যাচ্ছে না। গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী আরেক নারী জামিলা বেগম জানান, বন্যার পানি কিছুটা কমলেও দেখা দিয়েছে বাচ্চাদের জ্বর-সর্দিসহ পানিবাহিত নানা রোগ।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্গত এলাকাগুলোয়    ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত শনিবার রাতে কুলাঘাট ইউপির শিবেরকুটি গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের শিশুপুত্র শামীম মারা গেছে। সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের পাকারমাথা চরশিবের কুটি এলাকার বাসিন্দা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শাহ জামাল অভিযোগ করে বলেন, ‘মেডিকেল টিমের দেখাই পাওয়া যায় না। বাঁধের ওপর অনেক কষ্টে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাস করছি। শুধু আমি একাই থাকি না। এখানে প্রায় ৬০টির মতো পরিবার আছে। বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। শৌচাগারও নেই। আমার মেয়েসহ এখানকার অনেকেই ডায়রিয়া ও জ্বরে ভুগছে। কিন্তু কোনো মেডিকেল টিমের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি কোনো ওষুধও পাওয়া যায়নি। অনেক কথাই শুনেছি, কিন্তু বাস্তবতাটা ভিন্ন।’ অন্যদিকে সিভিল সার্জন ডা. আমিরুজ্জামান বলেন, ‘জেলায় ৫৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম ৩৬২ জন ডায়রিয়া রোগী, ৪৫ জন নিউমোনিয়া রোগী, আহত ১১ জন ও অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ৩৩৯ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছে। বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোয় যেন বন্যাপরবর্তী কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা না দেয়, সেজন্য প্রতিটি মেডিকেল টিমকে সতর্ক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আশা করি, কোথাও কোনো সমস্যা হবে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার বছর আগে নির্মিত পদ্মার বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বামতীর রক্ষা প্রকল্পের পুরো বাঁধ। মানুষ আশঙ্কা করছেন- বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আবারও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে তাদের ঘরবাড়ি-বসতভিটাসহ আবাদি জমি। এলাকাবাসীর অনেকেই জানান, বাঁধটি নির্মাণের পর এ বছরই পদ্মায় পানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। আর তাতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধ নির্মাণের পর কয়েক বছর নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করলেও এখন আবারও তারা সহায়-সম্বল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। তারা বলেন, এখন ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পুরো বাঁধই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, শিগগিরই বাঁধ সংস্কার করে এ অঞ্চলের মানুষের সহায়-সম্বল রক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।

সদরপুর (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আকোটেরচর স্লুইচসগেট খালের প্রবল স্রোতে নলেরটেক গ্রামের ৫০টি বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে নলেরটেক গ্রামের আইয়ুব আলী ডাক্তার ও এরন বেপারির ৭টি বসতঘর খালের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও ৪০টি বাড়ির গাছপালা ও বিভিন্ন অংশ খালে বিলীন হয়েছে। এলাকাবাসী ভাঙন প্রতিরোধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

বগুড়া : ধুনট উপজেলায় আবারও বাঁধ ভেঙেছে। গতকাল উপজেলার তারাকান্দি গ্রামে হলহলিয়া খালের বাঙ্গালী নদীর মোহনায় এই বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি এখন ৩৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে বাঙ্গালী নদীর পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

রংপুর : বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে আমন চারার জন্য হাহাকার চলছে। পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আমন চারার তীব্র সংকটে পড়েছেন। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি ত্রাণ হিসেবে আমনের চারা, দানাদার শস্যের বীজ ও সার বিতরণের কথা ঘোষণা করা হলেও মাঠপর্যায়ে কৃষকদের হাতে এখনো সেই সাহায্য পৌঁছয়নি। কোথাও কোথাও স্বল্প কিছু চারা মিললেও দাম দ্বিগুণের বেশি। তাই অধিকাংশ কৃষকের পক্ষেই নতুন করে চারা কিনে আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলের নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলায় ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৮ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়। বন্যায় ১ লাখ ৭০ হাজার ১৫ হেক্টর জমির আমন খেত তলিয়ে যায়। এরমধ্যে ৯৮ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমির আমন চারা সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ায় ৮ লাখ ৭১ হাজার ৫৩১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৩ হাজার ১০০ জন কৃষকের মধ্যে চারা বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি বিভাগ। প্রত্যেক কৃষককে ১ বিঘা জমির চারা প্রদান করা হবে। চারা সংকটের কথা স্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এখন কৃষকের হাতে খুব একটা চারা নেই। আর আমরাও ইচ্ছা করলে চাহিদামতো চারা দিতে পারব না। তবে সরকারের পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মধ্যে দানাদার শস্যের বীজ ও সার বিতরণ শুরু হলে তারা উপকৃত হবেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর