সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

নজরুলের সমাধিতে অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক


নজরুলের সমাধিতে অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা

জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গতকাল সকালে কবির কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পরিবারের সদস্যরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিদ্রোহ, সাম্য এবং জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গতকাল অগণিত মানুষ তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এ ছাড়া এ দিন ছিল কথামালা, গান ও কবিতার অনুষ্ঠান। কবির মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাকে স্মরণের আয়োজন। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবির সমাধিতে ছুটে আসেন তার পরিবারের সদস্য, ভক্ত, অনুরাগী ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি এ সময় তারা কবির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। বিএনপির পক্ষে শ্রদ্ধা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট ও নজরুল একাডেমি। সাংগঠনিকভাবে শ্রদ্ধা জানায় নজরুলসংগীত শিল্পী পরিষদ, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ সময় সমাধি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কবির নাতনি খিলখিল কাজী বলেন, ‘কাজী নজরুল ছিলেন সব মানুষের কবি। গ্রাম থেকে শহরে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নজরুল পড়াতে হবে, তার জীবন দর্শন জানাতে হবে। এ সময় বিশ্বে যেখানে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে সেখানে নজরুল দর্শনের চর্চা খুবই জরুরি।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যে অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই একই চেতনা নিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হবে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ নির্মূল করতে নজরুলের সাহিত্য চর্চার কোনো বিকল্প  নেই।’ আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের প্রতিটি পর্যায়ে আমরা জাতীয় কবিকে চিন্তা-চেতনায় নিয়েছি।’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতীয় কবি আমাদের আদর্শের প্রেরণা। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর যে প্রেরণা তা তিনি আমাদের দিয়েছেন। তার শিল্প-সাহিত্য-গল্প-কবিতা সবকিছুতে তিনি যেমন অবদান রেখেছেন, তেমনি মানুষের মুক্তি কামনা করেছেন নিজের কর্মের মধ্য দিয়ে।’ আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বাংলাদেশের যে অসাম্প্রদায়িক দর্শন, তা কাজী নজরুলের গান-কবিতায় রয়েছে। তিনি মানবতা ও সত্যের জয়গান গেয়েছেন, যা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।’

এদিকে নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।  উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে এতে বক্তৃতা করেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ, নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল। অনুষ্ঠানে নজরুলকে নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান। নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

পুরস্কার :  নজরুলসংগীতের তিন গুণী শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, ফেরদৌস আরা ও ড. লীনা তাপসী খান পেলেন নজরুল ইনস্টিটিউট প্রবর্তিত ‘নজরুল পুরস্কার ২০১৬ ’। কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

 

একক বক্তৃতা : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে একক বক্তৃতার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। বিকালে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে নজরুল : সম্প্রীতির সন্ধান শীর্ষক বিষয়ে একক বক্তৃতা প্রদান করেন অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর।  ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

সর্বশেষ খবর