সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

যানজটে নাকাল

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

বর্ষণ ও বন্যায় বিধ্বস্ত মহাসড়কগুলোতে চলছে সংস্কার কাজ। এজন্য পথে পথে বসানো হয়েছে প্রতিবন্ধক। এরইমধ্যে চলছে গরু-ছাগল-মালামালে উপচে পড়া ট্রাকসহ অগণিত ছোট-বড় লরি ও বাস। বাদ যাচ্ছে না ভাঙাচোরা নানান ধরনের যানবাহনও। সবমিলিয়ে ঈদযাত্রা পুরোদমে শুরু হওয়ার আগেই মহাসড়কগুলোতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ যানজট। এতে করে আগেভাগেই নাকাল হচ্ছেন যাত্রী সাধারণ। বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

টাঙ্গাইল : গতকাল ভোর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষ বহনকারী যাত্রীবাহী বাস, কোরবানির গরুবাহী ও মালবাহী ট্রাকসহ অতিরিক্ত অন্যান্য গাড়ির চাপের কারণে এ অবস্থা হচ্ছে। এ ছাড়াও মহাসড়ক সংস্কারজনিত প্রতিবন্ধকতার কারণেও এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে যানজটের সূত্রপাত হলেও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ধেরুয়া রেলক্রসিং, গোড়াই বাসস্ট্যান্ড, মির্জাপুর বাইপাস, পাকুল্লা, নাটিয়া পাড়া, করটিয়া, পৌলি ও এলেঙ্গা পয়েন্টে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু সেতু পারাপারের সময় ওজন স্কেলে মালামাল ওজনের জন্য লোড-আনলোড করতে গিয়ে ট্রাকের দীর্ঘ লাইন পড়ে যাচ্ছে। যার কারণে সেতুর ওজন স্কেল থেকে মহাসড়কের একলেনে ৩/৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রাকের লাইন থাকছে। এই লাইন গতকালও ভোর রাত থেকে ছিল। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম জানান, মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় সংস্কার কাজ চলছে। তাই অনেকাংশেই একপাশ দিয়ে গাড়িগুলোকে চলাচল করতে হচ্ছে। কয়েকটি পয়েন্টে যানজটের সৃষ্টি হলেও হাইওয়ে ও জেলা পুলিশের সঠিক তদারকির কারণে কোথাও জট দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। মহাসড়ক সচল রাখতে আজ থেকে ৭০০ পুলিশ কাজ করবে।

সাভার : ঢাকা-টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন পয়েন্টে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাকসহ যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ, বৃষ্টির কারণে মহাসড়কে খানাখন্দ, ফিটনেসবিহীন যানবাহন মহাসড়কে বিকল হয়ে পড়া-যানজটের মূল কারণ। যানজটের কারণে ২ ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। সাভার-আশুলিয়া মহাসড়কে বাড়ছে গাড়ি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর গাবতলী হয়ে সাভার আশুলিয়া বাইপাইল হয়ে চন্দ্রা পর্যন্ত ক্রমেই যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে বাড়ি ফেরা ঈদ যাত্রীদের বহনকারী গাড়ির চাপ। আশুলিয়ার বাইপাইল ও জামগড়ায় বৃষ্টির কারণে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যানজট তৈরি হচ্ছে। ইপিজেড-চন্দ্রা ১০ কিলোমিটার জুড়ে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে সাভার নবীনগর-আশুলিয়া-চন্দ্রা মহাসড়কে। সাভারের হেমায়েতপুর, বাজার বাসস্ট্যান্ড, নিউমার্কেট, নবীনগর ও বাইপাইলে যানবাহনগুলো যানজটে পড়ে ধীরে ধীরে চলছে। সবার আশঙ্কা, এর মাত্রা শতগুণে বেড়ে যেতে পারে দু-একদিনের মধ্যে। গতকাল নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে অন্তত ১০ কিলোমিটার অংশে যানজট সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড বৃষ্টি আর গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ যানজট সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। মহাসড়ক দিয়ে বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২৩ জেলার ৯২টি রুটের অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করছে। সরেজমিন দেখা গেছে, এ মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন ও লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি নেমে পড়েছে। ফলে তৈরি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা, বাড়ছে যানজট। ওইসব গাড়ি বিকল হয়ে মহাসড়কে যানজট বাড়াচ্ছে। যদিও ঘোষণা রয়েছে, মহাসড়কে কোনো ধরনের লেগুনা, অটোরিকশা চলাচল করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে সবই চলছে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য থেকে জানা গেছে, প্রতিদিন দীর্ঘ যানজটে মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, আর হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আশুলিয়ার সড়কের যানবাহনগুলো, বিশেষ করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বড় বড় লরি মহাসড়কে উঠার সময় চলাচলরত গাড়িগুলোর গতিরোধ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পাইনিওয়ার গার্মেন্টের পরিচালক প্রশাসন লুত্ফুল হায়দার বলেন,  ঈদ যাত্রীদের বহনকারী গাড়ির চাপ, আশুলিয়ার বাইপাইল ও জামগড়ায় বৃষ্টির কারণে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় শুরু হয়েছে যানজট। এ কারণে আমাদের পোশাক কারখানার পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে বেশি সময় লাগছে। বিদেশিরা কারখানায় আসতে চাচ্ছেন না । আশুলিয়ার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আবুল হোসেন বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক খানাখন্দ উন্নীতকরণের কাজ চলছে। যানবাহনের চাপও বেশি। ফলে যানজটের তীব্রতা বেড়েছে। তবে যানজট নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

দিনাজপুর : বন্যায় বিপর্যস্ত ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের ভাঙা স্থানগুলোতে বালুর বস্তা দিয়ে বা সাময়িকভাবে সংস্কার-মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের স্থানীয় পাকা সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল। এখনো বন্ধ রয়েছে বীরগঞ্জ-পীরগঞ্জ ও আমতলী-চিরিরবন্দরের সড়ক যোগাযোগ। জেলায় প্রায় অভ্যন্তরীণ এলাকায় শতাধিক ব্রিজ ও কালভার্ট ভেঙে যাওয়ায় অনেক স্থানে এখনো যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে বিভিন্ন এলাকা। এতে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে পড়তে হবে বাড়তি দুর্ভোগে। তবে বন্যার কারণে ১৪ দিন বন্ধ থাকার পর দিনাজপুরের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চালু হয়েছে। জানা গেছে, গতকাল সকালে যাত্রী নিয়ে কমিউটার (ডেমু) ট্রেন দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছার মাধ্যমে দিনাজপুরের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল চালু হয়। পরে ওই ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট গোলাম মোস্তফা জানান, দিনাজপুরের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল চালু হয়েছে। এ কারণে আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিটও বিক্রি শুরু হয়েছে। পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের ট্রেনলাইনে ট্রেন চলাচল শুরু না হলেও কাজ চলছে। ঈদের পর চালু হতে পারে। এদিকে বন্যায় দিনাজপুর সদর উপজেলার পাঁচবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ভেঙে গিয়ে যে গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল  সেসব স্থানে বালুর বস্তা দিয়ে সংস্কার করার ফলে ১৯ আগস্ট থেকে ঝুঁকির মধ্যেই মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে।

কুমিল্লা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী এবং মেঘনা সেতুর নিকটে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল ভোর থেকে মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকা থেকে দাউদকান্দি বিশ্বরোড পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন হাজারো যাত্রী। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী বাস চালক রুবেল মিয়া জানান, শনিবার যানজট না থাকলেও রবিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আবার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী বাস যাত্রী কামাল হোসেন বলেন, শেষ রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে যানজটে আটকা পড়েন, মেঘনা সেতু পর্যন্ত আসতে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে।

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাতে বৃষ্টির কারণে ভারী যানবাহন সড়কের বিভিন্ন স্থানে আটকা ছিল। সে কারণেই সকালে সেতুর টোলপ্লাজায় এসে জট সৃষ্টি হয়। মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে।

মাদারীপুর : পদ্মার প্রবল সে াতের কারণে ফেরি পারাপারে সময় বেশি লাগায় কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটের ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফেরি ঘাটে গরু বোঝাই ট্রাকের দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে। সন্ধ্যা রাতে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ঘাট এলাকায় প্রায় ২০০ গরু বোঝাই ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। ঘাটে এসেও সময় মতো ফেরি পারাপার না হতে পারায় গরু ব্যবসায়ীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। ফেরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গরু বোঝাই ট্রাককে অগ্রাধিকার দিয়ে ফেরি পারাপার করা হচ্ছে।

এদিকে পথে পথে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগও পাওয়া গেছে। গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, কুষ্টিয়া থেকে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটের ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফেরি ঘাট পর্যন্ত আসতে পথে পথে পুলিশকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। তার ওপর ঘাটে এসে সময়মতো ফেরি মিলছে না। গভীর রাতে ঘাটে এসে ফেরি না পেয়ে সারারাত থেকে ফেরির অপেক্ষায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কাঁঠালবাড়ী ঘাটের বিআইডব্লিউটি-এর সহকারী ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন মিয়া জানান, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কাঁঠালবাড়ী ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে ১৯টি ফেরির সবকটি ফেরিই চালু রয়েছে। ঘাটে গরু বোঝাই প্রচুর ট্রাক জমা হয়েছে। তবে আমরা অন্যান্য পরিবহনের চেয়ে গরু বোঝাই ট্রাককে অগ্রাধিকার দিয়ে ফেরি পারাপার করছি। পণ্য বোঝাই ট্রাক সীমিত আকারে পারাপার করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর