মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

হেভিওয়েটের সঙ্গে পাল্লায় তরুণ প্রার্থীরা

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি

হেভিওয়েটের সঙ্গে পাল্লায় তরুণ প্রার্থীরা

ভোটের রাজনীতি শুরু হয়েছে ঢাকা-১৬ আসনেও। রাজধানীর পল্লবী ও রূপনগর থানা নিয়ে এ আসনটি গঠিত। ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত আসনটিতে এরই মধ্যে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের

পোস্টার, লিফলেট ও ব্যানার শোভা পাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। অন্য কোনো দলের প্রার্থীর তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। আসন্ন ঈদুল আজহা ঘিরেও শুরু হয়েছে নতুন করে তৎপরতা। শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে পোস্টার সাঁটানোর হিড়িক পড়েছে প্রার্থীদের। এ আসনেও কার্যত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। তবে হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে মনোনয়নযুদ্ধে রয়েছেন অনেক তরুণও। আওয়ামী লীগ জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায়। অন্যদিকে বিএনপি চায় আসনটি পুনরুদ্ধার করতে।

আওয়ামী লীগ : এ আসনে বর্তমান এমপি মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচিকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন মিরপুরের মোল্লাহ্ পরিবারের সন্তান ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্। তার প্রয়াত পিতা হারুন মোল্লাহ্ পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে বৃহত্তর মিরপুরে আওয়ামী লীগের ঝাণ্ডা উড়িয়েছিলেন। দলকে ধরে রেখেছিলেন তিনি। দলের দুঃসময়ের সেই কাণ্ডারির সন্তান ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও দলের মনোনয়ন চাইবেন। জয়ের ধারাবাহিকতায় তাকেই পুনরায় নৌকা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তার অনুসারী স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। ইলিয়াস মোল্লাহ্ নিজেও বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে এলাকাবাসীকে যে ওয়াদা দিয়েছিলাম, তা বাস্তবায়ন করেছি। সে কারণে এবারও জনগণ আমাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার প্রথম কিছু দিন কাজে হাত দিতে পারিনি, কারণ তখন ঢাকা সিটির মেয়র ছিলেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। খোকা অপসারিত হওয়ার পর আমার এলাকায় উন্নয়ন শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। পানি, গ্যাস, বিদ্যুতের সমাধান করেছি। ২০১৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে রাস্তাঘাট পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে। কালশীতে পানি নিষ্কাশনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তুরাগে একটি বাসস্ট্যান্ড ও একটি হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় মানুষ নিরাপদে বসবাস করছে। কোনো চাঁদাবাজ, মস্তানের স্থান নেই। মানুষ যেসব সমস্যা নিয়ে আসছে তা সমাধান করি এবং আগামীতেও করব। দলীয় নেতা-কর্মী সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করছি। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখানে সংগঠনকে শক্তিশালী করেছি। মনোনয়ন দেবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আশা করি হ্যাটট্রিক জয়ের জন্য আগামীতে আমিই মনোনয়ন পাব।’

গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন বর্তমান মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বিজিএমইএর সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। সে লক্ষ্যেই মাঠ গোছাচ্ছেন বলে জানা গেছে। দলীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সময় দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনোনয়ন চাইব। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় সভানেত্রী। মাঠের জরিপ ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় যিনি যোগ্য তিনিই পাবেন দলীয় মনোনয়ন।’

পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনী মাঠ সাজাচ্ছেন যুবলীগ ঢাকা মহানগরী উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১৬ আসনে নৌকার হাল ধরতে চান। যুবলীগ উত্তরের গুরুদায়িত্ব পালন করায় এই এলাকায় যুব ও ছাত্রসমাজের মধ্যে তার একটা আবেদন রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এলাকায় মানুষের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে যুবলীগে দায়িত্ব পালন করছি। দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে রয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে সারা দেশে বিএনপি-জামায়াত জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধ করলেও ঢাকায় করতে পারেনি। কারণ যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলেন। আমরাও বৃহত্তর মিরপুর, ফার্মগেট, উত্তরায় সকাল থেকে গভীর রাত সশরীরে মাঠে ছিলাম। মাঠে আমার অবস্থান রয়েছে। মাঠের জরিপে রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকেই নৌকা দেবেন বলে আশা করি।’ এ আসনে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফকির মহিউদ্দিন আহমেদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন এলাকার মানুষের সঙ্গে রয়েছি। কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি সফল করার পাশাপাশি জাতীয় দিবস ছাড়াও কর্মিসভা, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করছি। দলীয় মনোনয়ন চাইব। আমাকে মনোনয়ন দিলে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হব। তবে যদি না পাই তাহলে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই কাজ করব।’

বিএনপি : এ আসনে বিএনপির পক্ষে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার সহধর্মিণী অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক মনোনয়ন পেতে পারেন। এ ছাড়া এ আসনে বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ফুটবলার আমিনুল হক, বিএনপির মহানগরী উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান এবং কৃষক দল ও মহানগরী উত্তরের সহসভাপতি প্রবীণ নেতা এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেনও এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে চান তিনবারের সাবেক কাউন্সিলর মো. ইসমাইল হোসেন বেনু। এলাকায় তারও জনপ্রিয়তা রয়েছে। ২০০৮ সালের জতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। প্রবীণ এই আইনজীবীর বিরুদ্ধে ৪২টি মামলার খড়্গ ঝুলছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সবুজ সংকেত নিয়ে তিনি নিয়মিত ওই এলাকায় যোগাযোগ রাখছেন। সদস্য সংগ্রহ অভিযান ও নবায়ন কর্মসূচিতেও অংশ নেন সাবেক এই মন্ত্রী। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও এ আসনে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। রাজনৈতিক মামলাসহ অন্য কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার সহধর্মিণী প্রার্থী হতে পারেন। বিএনপি-প্রধান বেগম জিয়ার সঙ্গেও এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রফিকের কথা হয়েছে। এজন্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার সঙ্গে শাহিদা রফিকও নিয়মিত এলাকায় যোগাযোগ রাখছেন। এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এর আগেও ম্যাডাম (বেগম খালেদা জিয়া) ঢাকা-১৬ আসনে আমাকে নির্বাচনের সুযোগ দিয়েছেন। এবারও তার নির্দেশে আমি ১৬ আসনে গণসংযোগ করছি। এলাকার নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ আমার পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হবে বলে আমি আশা করি।’ দলের মনোনয়ন চান মোয়াজ্জেম হোসেনও। তার নিজ অর্থায়নে ১৯৯৩ সালে পল্লবীতে সাড়ে ৩ বিঘারও বেশি জমির ওপর ‘শহীদ জিয়া মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ ও ‘শহীদ জিয়া গার্লস ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন। একই সঙ্গে একটি মেডিকেল সেন্টারও নির্মাণ করেন তিনি। এরই মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে তার নামে ব্যানার-পোস্টার শোভা পাচ্ছে দেয়ালে দেয়ালে। দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পল্লবী থানা বিএনপির সঙ্গে জড়িত থাকায় দলের স্থানীয় সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। দল আমাকে সুযোগ দিলে ধানের শীষের এ আসনটি পুনরুদ্ধার করব ইনশা আল্লাহ।’ দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গে ফুটবলার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার শৈশব-কৈশোর এমনকি যৌবন সবই পল্লবী এলাকায়। এখান থেকেই আমি জাতীয় দলের ফুটবলার হয়েছি। তাই এ আসন নিয়ে আমার স্বপ্ন আছে। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, আসনটি পুনরুদ্ধারে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যার হাতে দলীয় প্রতীক তুলে দেবেন তার পক্ষেই আমি কাজ করব।’

 

সর্বশেষ খবর