বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
আন্তর্জাতিক গুম দিবস

গুম হওয়া ব্যক্তিদের ঈদের আগেই ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদের আগেই গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানিয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে এ দাবি জানান তারা। আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে গুম হওয়া ২৯টি পরিবারের সদস্যরা ‘ঈদের আগে গুম হওয়া সন্তানদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিন’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা পারভেজ হোসেনের মেয়ে হৃদি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেন, ‘আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। আমি আমার বাবার সঙ্গে ঈদ করতে চাই। মামণি আমার ঈদের জামা কিনে দেয়নি। এখন আর আমাকে পুতুল কিনে দেয় না, আইসক্রিম কিনে দেয় না। হাসিনা আন্টি আপনি ফিরিয়ে দেন বাবাকে, তাহলেই বাবা আমাকে সব কিছু কিনে দেবে।’ অনুষ্ঠানে হৃদির মতো আরও অনেক বাবা হারা, ছেলে হারা, ভাই হারা, স্বামী হারা স্বজন বক্তব্য দেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান দাবিতে স্বজনদের বক্তব্যে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। অনেক চোখ ছলছল করতে থাকে জলে। গুম হওয়া খালিদ হাসান সোহেলের ছোট্ট ছেলে আরিয়ান বলেন, ‘আমি সব সময় আব্বুকে মিস করি। হাসিনা আন্টি আব্বুকে ফিরিয়ে দিন। আমি আব্বুর হাত ধরে ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে চাই।’ তিতুমীর সরকারি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুর কাদের মাসুমের মা আয়শা বেগম বলেন, ‘ছেলে গুম হওয়ার পর ভিতরটা কষ্টে কষ্টে ঘুনে ধরেছে। এখন শুধু দেহের কভারটা আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিও স্বজন হারাদের একজন। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেন।’ ছেলে হারা সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল মতিন বীরবিক্রম বলেন, ২০১৪ সালের ২৯ মার্চ কুমিল্লার বাড়ি থেকে র‌্যাব তার ছেলে কাজী রকিবুল ইসলাম শাওনকে তুলে নিয়ে যায়। র‌্যাব ডিজি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে ছেলের সন্ধান চেয়ে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু ছেলেকে এখনো পাইনি। গুম হওয়া আল আমিনের ছোট ভাই রুহুল আমিন বলেন, আমার মা জানতে চায় তোর ভাই কবে ফিরবে, মাকে আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না। সম্রাট মোল্লার বোন কানিজ ফাতেমা বলেন, ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর ভাইকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে, এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাইনি। আমরা তার সন্ধান চাই। স্বজনদের মধ্যে বক্তব্য দেন, গুম হওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল মোকাদ্দাসের চাচা মো আবদুল হাই, গুম হওয়া সুমনের মা হাজেরা বেগম, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফ ইসলাম, রেদোয়ানের মা সেলিনা হোসেন, কাউসারের ছোট্ট মেয়ে মীম, চঞ্চলের ছেলে আহাদ, জাহিদুল করিম তানভীর স্বজন আফরোজা ইসলাম আঁখি, চঞ্চলের মা হাজেরা, সুজনের ভাই শাকিল। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কর্মী ও রাজনীতিবিদরাও। তারা বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৯১ জনকে গুম করা হয়েছে। এসব গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দিতে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠনেরও দাবি জানান বক্তারা। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, স্বজন হারাদের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এখনকার স্বজন হারাদের বেদনা শুনছেন না, দেখছেনও না। কারণ এ রাষ্ট্র সরকার এখন মানবিক নয়। যিনি সবার কথা শুনতে পান। এসব গুম খুনের জন্য একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী গুম-খুন করত। এখন স্বাধীনতার চেতনার দাবিদার ক্ষমতাসীনরা লুকোচুরি করে গুম করে চলেছে। ক্রসফায়ারে হত্যা করছে। কিন্তু তাদের এসব কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে তারা আসলে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বা স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিরা যতদিন ফিরে না আসবে, ততদিন মনে করব প্রধানমন্ত্রীর কানে এ কান্না যাচ্ছে না। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন, আইন ও সালিস কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন ও নারীপক্ষের সদস্য শিরীন হক প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর