ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সিলেটে গড়ে উঠছে ইলেকট্রনিক্স সিটি (হাইটেক পার্ক)। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী বিদেশে রপ্তানি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে গড়ে তোলা হচ্ছে এ পার্ক। একই সঙ্গে এ পার্কে তৈরি হবে আইটি খাতের দক্ষ জনবল।
বর্তমানে প্রকল্পটি ভূমি উন্নয়ন (মাটি ভরাট) কাজ চলছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৭৮ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়ন হলে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী রপ্তানিতে নতুন দিগন্ত খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একুশ শতকের চাহিদা পূরণে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার পদক্ষেপ হিসেবে সিলেটে হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় অধিগ্রহণ করা হয় ১৬৭ একর জমি। গত বছরের ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মেগা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বর্তমানে অর্ধশতাধিক ড্রেজার দিয়ে প্রকল্পের মাটি ভরাট কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রায় ৬০০ শ্রমিক সেখানে কাজে নিয়োজিত আছেন। সূত্র জানায়, এই হাইটেক পার্কের দুটি অংশ থাকবে। একটি অংশে আইটি ইন্ডাস্ট্রিজ এবং অন্য অংশে থাকবে আবাসন, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, শপিং কমপ্লেক্স প্রভৃতি। আইটি ইন্ডাস্ট্রি অংশে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার উৎপাদন, বিমানের যন্ত্রাংশ তৈরি, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টারসহ দুটি ট্রেনিং সেন্টার থাকবে। এ ইন্ডাস্ট্রিতে উৎপাদিত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার দিয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে। ট্রেনিং সেন্টারে গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যানড্রয়েড মোবাইল অপারেশন, জাভা এস ই-৮ প্রোগ্রামিং, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সার্ভার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, বিপিও, ই-কমার্স, এস কিউ, কোর হার্ডওয়ার্ক অ্যান্ড অপারেটিং সিস্টেম, এল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ওরাকল প্রভৃতি বিষয়ে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এতে প্রতি বছর এ হাইটেক পার্ক থেকে হাজার হাজার দক্ষ জনবল তৈরি হবে। এ দক্ষ জনবলের একটি অংশ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে আরও এগিয়ে নেওয়ার কাজে জড়িত থাকবেন। এ ছাড়া আরেকটি অংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবেন।
সিলেট হাইটেক পার্কের প্রকল্প পরিচালক গোলাম সারোয়ার ভুঁইয়া গণমাধ্যমকে জানান, ‘সিলেট হাইটেক পার্ক একটি ব্যতিক্রমী ইন্ডাস্ট্রি হবে। এখানে দুটি অংশ থাকবে। আইটি ইন্ডাস্ট্রি অংশে উৎপাদিত হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিক্স পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এ অংশে দেশের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাব স্থাপন করে গবেষণা কাজ চালাতে পারবে।’ তিনি জানান, এ বৃহৎ প্রকল্পে আরও প্রায় ৬০০ একর জমি অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।গোলাম সারোয়ার ভুঁইয়া আরও জানান, সিলেট হাইটেক পার্ক প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস। প্রকল্পের কাজ শেষে হাইটেক পার্ক আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলে এখানে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তন্মধ্যে সিংহভাগই হবেন আইটি পেশাজীবী। এ প্রকল্পের মৌলিক কাঠামো নির্মাণ কাজ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, শুরুতে এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮১ কোটি টাকা। তবে বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭৮ কোটি টাকায়। সম্প্রতি সিলেট সফরকালে এই ব্যয়ের তথ্য জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার জানিয়েছেন, হাইটেক পার্কের কাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। বর্তমানে সেখানে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। মাটি ভরাট কাজ পর্যবেক্ষণের জন্য সেখানে একটি স্থাপনাও নির্মাণ করা হয়েছে। হাইটেক পার্ক প্রকল্পটি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি সিলেটের আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।