মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

ধান চাষে ইউরিয়া সাশ্রয়ী স্প্রে

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

ধান চাষে ইউরিয়া সাশ্রয়ী স্প্রে

বিএডিসির সার ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক কৃষিবিদ আরিফ হোসেন খানের উদ্ভাবিত ‘ধান চাষে ইউরিয়া সাশ্রয়ী স্প্রে’ প্রযুক্তি দারুণ সাড়া ফেলেছে। এ স্প্রে ব্যবহারের ফলে বোরো ২০১৬-১৭ মৌসুমের ধান চাষে ৩৫ ভাগ এবং ২৫ ভাগ ইউরিয়া সার সাশ্রয় করে ধানের ফলন বৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে প্রায় ৬ ভাগ ও প্রায় ১১ ভাগ। প্রযুক্তি উদ্ভাবক আরিফ খান বলেন, স্প্রে প্রযুক্তির মাধ্যমে ধান চাষে সাফল্যের এ তথ্যটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য ধান উৎপাদনকারী দেশের জন্য একটি মাইলফলক হতে পারে। কারণ স্প্রে প্রযুক্তির মাধ্যমে ধান চাষের এমন সাফল্য দেশসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখনো অর্জিত হয়নি। এ কারণে সরকারের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ধান চাষ বিষয়ে প্রযুক্তিটি একটি মডেল হতে পারে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ হতে পারে পাইওনিয়ার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সালে প্রযুক্তিটি উদ্ভাবনের পর ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় ২৭৫ জন চাষি এবং কর্মকর্তার মাধ্যমে ৬ হাজার ২০০ বিঘা জমিতে প্রযুক্তিটি বাস্তবায়ন করে মাঠপর্যায়ে সাফল্য পাওয়া গিয়েছিল। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শুধু ধান চাষে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া সম্ভব হতে পারে। এ কারণে সরকারের ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা সাশ্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। আর বার্ষিক অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হতে পারে ১৫ লাখ মেট্রিক টন। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের খামারের গবেষণা মাঠে চলতি বোরো মৌসুমে ব্রিধান-২৮ এর উপরে এমএস স্টুডেন্ট সেরাজাম মুনিরা তার থিসিসের আওতায় গবেষণাটি করেন। গবেষণার সুপারভাইজার ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল হক। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সম্পাদিত এই পরীক্ষাতে সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ধান গাছে পাতার মাধ্যমে নাইট্রোজেন প্রদান একটি কার্যকর এবং বিকল্প পদ্ধতি হতে পারে।

আরিফ খান আরও বলেন, মাটিতে ইউরিয়া প্রয়োগ করলে যেখানে গাছ ৩০-৩৫ ব্যবহার করতে পারে, সেখানে পাতায় প্রয়োগ করলে শতকরা ৯০ এর চেয়ে বেশি ব্যবহার করতে পারে বলে উন্নত বিশ্বের গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায়। তিনি আরও বলেন, একক নাইট্রোজেন পাতায় প্রদান করলে তা ৪ একক থেকে ১৫ একক পর্যন্ত মাটির প্রদানকে প্রতিস্থাপন করতে পারে। পাতায় যখন ইউরিয়া দ্রবণ স্প্রের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়, তখন প্রয়োগকৃত ইউরিয়ার ৫০ ভাগ ত্রিশ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টা সময়ের মধ্যে গাছের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে বলে আমেরিকার মিসিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায়। এই গবেষণার সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল হক বলেন, গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলটি দেশে ধান চাষে ইউরিয়া সারের ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। এ ছাড়া ফোলিয়ার ফিডিং কৌশলের মাধ্যমে ধান গাছে নাইট্রোজেনের জোগানের বিষয়টি খরা প্রবণ বরেন্দ্র এলাকার চাষিসহ দেশের সব এলাকার চাষিদের ধান চাষে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমন মৌসুমে বৃষ্টির অভাবে চাষিরা যখন তাদের জমিতে সময় মতো ইউরিয়া দিতে পারবে না, তখন পাতার মাধ্যমে খুব সহজেই চাষিরা ইউরিয়া সারের দ্রবণ স্প্রের মাধ্যমে প্রয়োগ করে ধান গাছের নাইট্রোজেনে চাহিদা তাত্ক্ষণিকভাবে মিটিয়ে দিতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, যেহেতু এই প্রযুক্তিটির মাধ্যমে মাটিতে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ ইউরিয়া সার কম প্রদান করা হচ্ছে ফলে প্রযুক্তিটির প্রয়োগে মাটি, পানি এবং পরিবেশও অধিক সুরক্ষিত থাকবে।

সর্বশেষ খবর