সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিটিং সার্ভিস নৈরাজ্য থামছে না

গাড়িসংখ্যা, ভাড়া ও রুট ঠিক করে নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ কমিটির

বিশেষ প্রতিনিধি

রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস নিয়ে নৈরাজ্য থামছে না। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যাত্রী হয়রানি, যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী তোলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে সিটিং সার্ভিস নামে পরিচালিত পরিবহনগুলোর বিরুদ্ধে। এই প্রেক্ষাপটে গাড়িসংখ্যা, ভাড়া ও রুট নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে সীমিত আকারে সিটিং সার্ভিসের বাস চালু রাখার সুপারিশ করেছে বিআরটিএ গঠিত সিটিং সার্ভিসবিষয়ক কমিটি। সম্প্রতি এই কমিটি বিআরটিএর কাছে তাদের খসড়া রিপোর্ট জমা দিয়েছে। রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় সিটিং সার্ভিস বাস থাকবে কি-না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত এপ্রিলে এই কমিটি করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি কোম্পানির সব বাস সিটিং সার্ভিস হিসেবে না চালিয়ে কিছু বাস সিটিং এবং বাকিগুলো নন-সিটিং হিসেবে পরিচালনা করতে হবে। তবে কোন কোম্পানির কতগুলো গাড়ি সিটিং, কতগুলো নন-সিটিং চলাচল করবে, তা ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির হাতে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একটি রুটকে কয়েকটি স্ল্যাবে ভাগ করে স্ল্যাবভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণ করা যেতে পারে। সিটিং সার্ভিসের বাসগুলো আলাদা রঙের করে এসব বাসের জন্য সীমিত সংখ্যক স্টপেজ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সিটিং সার্ভিসের বাসে কোনো অবস্থাতেই দাঁড়ানো যাত্রী বহন না করা এবং এসব বাস লোকাল হিসেবে চালানো বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে বিআরটিএতে কমিটির বৈঠকে এসব সুপারিশ চূড়ান্ত হবে বলে কমিটির একজন সদস্য জানান।

এর আগে সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া নেওয়াসহ যাত্রী হয়রানির নানা অভিযোগে বাস মালিকদের সংগঠন সড়ক পরিবহন সমিতি গত ১৬ এপ্রিল থেকে সিটিং সার্ভিসে বাস চালানো বন্ধের ঘোষণা দেয়। এরপর বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান শুরু করলে অনেক বাস মালিক সড়কে বাস না নামালে পরিবহন সংকট দেখা দেয়। এ সময় ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে বিভিন্ন স্থানে। ওই প্রেক্ষাপটে সিটিং সার্ভিস নিয়ে সুপারিশ দিতে কমিটি গঠন করে বিআরটিএ। এতে বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) মাহবুবে রব্বানীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের প্রতিনিধি, বিআরটিএ, সাংবাদিক ও বাস মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিরা। জানা গেছে, সিটিং সার্ভিসের পাশাপাশি নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতেও ২৬টি সুপারিশ করেছে কমিটি। এগুলোর মধ্যে রুট পুনর্বিন্যাস করে ঢাকা শহরের সব বাসকে নির্দিষ্ট কয়েকটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলাচলের ব্যবস্থা, রুট ফ্র্যাঞ্চাইজিং পদ্ধতিতে গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তন করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ভাড়া  নৈরাজ্য, যাত্রী হয়রানি ও একচেটিয়া ব্যবসা ঠেকাতে প্রাইভেট অপারেটরদের অনুকূলে নতুন করে রুট পারমিট দেওয়া বন্ধ রেখে বিআরটিসির মাধ্যমে অধিক সংখ্যক নতুন দ্বিতল বাস চালু, প্রয়োজনে আন্তঃজেলা থেকে প্রত্যাহার করে ঢাকা সিটিতে স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। বিআরটিসি বাসের লিজ প্রথা বাতিল করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাস সার্ভিস পরিচালনা, আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করে অধিক সংখ্যক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বা সার্ভিসের প্রবর্তন করারও সুপারিশ করেছে কমিটি। কমিটির সদস্য একাত্তর টেলিভিশনের পরিচালক (সংবাদ) সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত খুব শিগগিরই আসছে। বিআরটিএকে দেওয়া খসড়া সুপারিশে মনিটরিং ও জরিমানার কথাও বলা হয়েছে। আমরা বিআরটিএকে চূড়ান্ত সুপারিশ ২/১ দিনের মধ্যে জমা দেব। তারা সিদ্ধান্ত নেবে সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন করবে।

সর্বশেষ খবর