সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পশ্চিমবঙ্গ থেকে রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক নয় : মমতা

প্রতিদিন ডেস্ক

পশ্চিমবঙ্গ থেকে রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক নয় : মমতা

মিয়ানমার থেকে উত্খাত হওয়া যেসব রোহিঙ্গা মুসলিম ভারতে ঢুকেছেন, তাদের ‘পুশব্যাক’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। রাজ্যগুলোকে এই নীতি মেনে চলতে বলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই নির্দেশ মানতে নারাজ পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। নবান্নের শীর্ষ মহলের সিদ্ধান্ত, উদ্বাস্তু রোহিঙ্গারা এ রাজ্যে থাকতে চাইলে মানবিকতার খাতিরেই তাদের থাকতে দেওয়া হবে। কোনো অবস্থাতেই জোর করে তাদের ফেরত পাঠানো হবে না। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তার কথায়, ‘রোহিঙ্গারা মুসলিম বলেই কেন্দ্র এমন অবস্থান নিচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্র অমানবিক হলেও আমরা তা হতে পারব না।’

মিয়ানমারে সন্ত্রাসের বলি হয়ে কয়েক বছর ধরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা সে দেশ ছেড়ে নৌকায় করে বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছে। ২৫ আগস্ট থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় সেই সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে ইতিমধ্যে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার জম্মু লাগোয়া এলাকায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্র্রতি মিয়ানমারে গিয়ে এদের সবাইকে ‘পুশব্যাক’ করার নীতি ঘোষণা করে এসেছেন।

পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা তেমন নয়। বনগাঁ-বসিরহাট সীমান্ত এবং উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু এলাকা দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা এ রাজ্যে ঢুকেছে। ধরা পড়ার পর তাদের অনেকেই এখন জেলে। আসাম-দাঙ্গার পর উত্তরবঙ্গেও বেশ কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের কাউকেই ‘পুশব্যাক’ করা হবে না বলে সরকারি স্তরে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

যদিও কেন্দ্রের চাপে এ রাজ্যের বিভিন্ন হোমে বন্দী থাকা ২৩ জন মহিলা ও শিশুর পরিচয়পত্র বিতরণ বন্ধ রাখতে হয়েছে। ইউনাইটেড নেশন হাইকমিশন ফর রিফিউজিস রোহিঙ্গাদের জন্য বিশেষ পরিচয়পত্র দিচ্ছে। এ রাজ্যের হোমে বন্দীদেরও তেমন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয়কুমার দে-কে ধমক দিয়ে সেই পরিচয়পত্র বিতরণ বন্ধ করিয়েছেন। এ দেশে ১ লাখ ২০ হাজার তিব্বতি, ৬০ হাজার পাখতুন, ১০ হাজার সিংহলি শরণার্থী রয়েছেন। কেন্দ্র কখনো এদের নিয়ে বিশেষ অবস্থান নেয়নি। অথচ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার ও নির্বিচার হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে বহু দেশ তাদের জন্য দরজা খুলে দিলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘সব রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুই অনুপ্রবেশকারী। তাদের সবাইকে ফেরত পাঠানো হবে।’ রিজিজুর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে জাতিসংঘ। যার উত্তরে রিজিজু আবার বলেছেন, ‘গোটা বিশ্বে ভারতেই সবচেয়ে বেশি উদ্বাস্তুর বাস। অতএব উদ্বাস্তু সমস্যা ও তা সামলানোর বিষয়টি নিয়ে আমাদের জ্ঞান দেওয়ার দরকার নেই।’ এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ‘পুশব্যাক’ করা এবং না করার সিদ্ধান্ত দুয়ের পেছনেই রাজনীতির ছাপ দেখছেন অনেকে। তাদের মতে, হিন্দুত্বের রাজনীতি তুলে ধরতেই ‘পুশব্যাক’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। অন্যদিকে বাঙালি মুসলিমদের ‘পুশব্যাক’ না করে লাভের অঙ্ক কষছে তৃণমূল।

সর্বশেষ খবর