বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

চ্যালেঞ্জের মুখে বাদশা, মিনুও অস্বস্তিতে

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

চ্যালেঞ্জের মুখে বাদশা, মিনুও অস্বস্তিতে

জোটগত নির্বাচন হলে রাজশাহী-২ (সদর) আসন এবারও ছাড়তে হতে পারে ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশাকে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি এ আসন থেকে টানা দুবারের সংসদ সদস্য। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবার আসনটি পেতে চায়। এ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীতল সম্পর্ক চলছে। ফজলে হোসেন বাদশা অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

এ আসনে বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে মনোনয়নের লড়াই হতে পারে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর। আবার কেউ কেউ প্রবীণ নেতা কবীর হোসেনকেও এ আসনের প্রার্থী হওয়ার কথা বলছেন। এ নিয়ে মিনুও অস্বস্তিতে রয়েছেন। তবে অনেকেই মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত মিনুই দলীয় মনোনয়ন পাবেন। রাজশাহী মহানগরী আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে এরই মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে দলীয় মেয়র পদে মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে লিটন বলেন, ‘আমি রাসিক নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তে অংশ নিচ্ছি। সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত বলে ধরে নেব।’ এ সিদ্ধান্তে লিটন সমর্থকদের মধ্যে স্বস্তি থাকলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতারা আগামী নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের অন্তত তিনজন নেতা নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করে নির্বাচনী এলাকায় সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অধ্যাপক আবদুল খালেক, মহানগরী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও মহানগরী যুবলীগ সভাপতি রমজান আলী।

আর জোটগতভাবে নির্বাচন হলে প্রার্থী হবেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। এলাকায় তার ভালো ভাবমূর্তি রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীই মনে করছেন, বাদশা দুই মেয়াদে রাজশাহী সদর আসনে সংসদ সদস্য থাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বঞ্চিত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও মহানগরী সহসভাপতি মীর ইকবাল বলেন, ‘জোটের প্রার্থীকে দেশের অন্য যে কোনো আসন দিয়ে রাজশাহী সদর আসন দলকেই দিতে হবে।’ ডাবলু সরকার বলেন, ‘গত দুবার রাজশাহী সদর আসনে মহাজোটের প্রার্থী দেওয়ায় আমাদের সংগঠনের অনেক ক্ষতি হয়েছে। জোট থেকে নৌকা নিয়ে এমপি হলেও ফজলে হোসেন বাদশার কাছ থেকে আওয়ামী লীগের কোনো কর্মীই কোনো সুবিধা পাননি। কেউ মামলার আসামি হয়ে জেলে গেলেও তাকে তিনি ছাড়াতে যাননি। দলের কারও চাকরি হয় না।’ তিনি বলেন, ‘নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করলেও বিভিন্ন সমাবেশে বাদশা সরকারের সমালোচনা করেন। তাই এবার এ আসনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে। প্রার্থী হিসেবে আমিও মাঠে আছি।’ গত ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের কাছেও সদর আসনটিতে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের। তবে আওয়ামী লীগের দাবিকে আমলে নিচ্ছেন না বর্তমান সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, ‘যেসব আসনে আওয়ামী লীগের এমপি আছেন, তাদের চেয়ে অনেক বেশি উন্নয়ন করেছি আমি। এতে শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যারা সভাপতি হয়েছেন, কয়েকটি ছাড়া তারা সবাই আওয়ামী লীগের পদে আছেন।’ জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে সদর আসনের বাইরে তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী নন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘জোট রক্ষা করতে হলে আমাকেই মনোনয়ন দিতে হবে।’ বিএনপি থেকে একক প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। তবে মহানগরী বিএনপি সভাপতি ও রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সঙ্গে তার শীতল সম্পর্ক চলছে। ফলে এখানে মনোনয়ন চাইতে পারেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ও প্রবীণ নেতা কবীর হোসেন। মহানগরী বিএনপি বর্তমানে একাধিক ভাগে বিভক্ত। একদিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাসিক মেয়র ও মহানগরী বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মিজানুর রহমান মিনু। তা ছাড়া এখনো মহানগরী বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। বিএনপির একটি অংশ চাইছে রুহুল কবীর রিজভীকে প্রার্থী করতে। তিনি এলাকায় খুব একটা না এলেও শহরের কোনো কোনো এলাকায় তার পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন ঝুলতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে কোন আসনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় প্রধান।’

সর্বশেষ খবর