বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে কর্মসংস্থান বাড়াবে বিশ্বব্যাংক

১ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার প্রস্তাব

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে বাংলাদেশকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, যা অর্থ মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করে দেখছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রস্তাবটিকে বেশ বড় বলেই মনে হচ্ছে, যার পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তবে বড় আকারের এই ঋণ প্রস্তাবের সঙ্গে বড় ধরনের বেশকিছু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের বিষয়েও শর্ত জুড়ে দিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক দাতা সংস্থাটি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক যে ঋণ প্রস্তাবটি দিয়েছে তাকে বেশ বড় বলেই মনে হচ্ছে। তবে তারা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের বিষয়ে বেশকিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে। আমরা সেগুলো পুনর্বিবেচনা করতে বলেছি।’ বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার যে ধরনের শিল্পকে সুরক্ষা দিচ্ছে সেগুলো দেশীয় বা অভ্যন্তরীণ চাহিদানির্ভর শিল্প। এসব শিল্প তেমন শ্রমঘন নয়। ফলে এরা তেমন কোনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছে না। আবার শ্রমঘন খাতও অটোমেশনের মাধ্যমে শ্রমনির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠছে। এর ফলে কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে বাণিজ্যনীতির সংস্কার করতে হবে। দেশে গার্মেন্টশিল্পের বাইরে রপ্তানিমুখী যে শ্রমঘন খাত রয়েছে সেগুলোকে প্রণোদনা দিতে হবে।’ কর্মসংস্থান ইস্যুতে ঋণ সহায়তার বিষয়ে গত ২৩ জুলাই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি কিমিয়াও ফান। ওই বৈঠকে কর্মসংস্থান বাড়াতে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে সরকারকে ‘উন্নয়ন নীতি ঋণ’ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। চলতি মাসে আবারও এ নিয়ে আলোচনার আগে অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়। গত ১৬ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে কর্মসংস্থানের ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকলেও ২০১০ সালের পর থেকে তা কমে আসছে। ‘বাংলাদেশ : প্রোপোজড ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিটস ফর মোর, বেটার, অ্যান্ড ইনক্লুসিভ জব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, চাকরিসংস্থানের এই নেতিবাচক প্রবণতা অকৃষি খাত থেকে শুরু করে উৎপাদনমুখী শ্রমঘন খাতেও বজায় রয়েছে। ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত গার্মেন্টশিল্পে প্রতি বছর যেখানে ৩ লাখ ২০ হাজার শ্রমিক চাকরিতে ঢুকেছে, সেখানে ২০১০ সালের পর তা কমতে কমতে বছরে ৬৪ হাজারে নেমে এসেছে। সংস্থাটি আরও বলছে, তৈরি পোশাকের পর বাংলাদেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং ওষুধশিল্পের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব খাত তাদের সম্ভাবনার চিত্রটিও তুলে ধরতে সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু রপ্তানি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উৎস হিসেবে এ খাতগুলো যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছে না। কারণ, দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতিতে তৈরি পোশাক খাত যেভাবে গুরুত্ব পেয়েছে সেভাবে অন্যান্য খাত পায়নি। সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এ সময় কর্মক্ষম (১৫ বছরের বেশি) জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। বিপরীতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। দেখা যাচ্ছে আলোচ্য সময়ে যে হারে কর্মক্ষম জনশক্তি বেড়েছে কর্মসংস্থান বেড়েছে তার চেয়ে বেশি হারে। অন্যদিকে ২০১০ সাল থেকে পরবর্তী সময়গুলোয় কর্মসংস্থানের এই গতি উল্টো পথে ধাবিত হয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আগের চেয়ে বাড়লেও কর্মসংস্থানের হার ব্যাপকভাবে কমেছে। আলোচ্য সময়ে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ। কর্মক্ষম জনশক্তি বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর বিপরীতে কর্মসংস্থানের হার ছিল বছরে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলেছে, চাকরি সৃষ্টির সম্ভাবনাগুলো শহরের অবকাঠামো ঘাটতি মোকাবিলার ওপরও নির্ভর করে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ লোকের বসবাস এখন ঢাকায়, শিল্প খাতের ৪৫ শতাংশ এবং সেবা খাতের ৩৭ শতাংশ কর্মসংস্থান এখানে। জমির সীমাবদ্ধতার কারণে দেশের সব অংশে নতুন বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে দ্বিতীয় পর্যায়ের শহরগুলোও বিনিয়োগের বিকল্প স্থান হয়ে উঠতে পারেনি। পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাতে অবকাঠামোগত সমস্যা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় ঘাটতি দক্ষ শ্রমশক্তি আকর্ষণে ভূমিকা রাখতে পারছে না।

সর্বশেষ খবর