বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাসচাপায় প্রাণ গেল শিশুর গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাসচাপায় প্রাণ গেল শিশুর গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর

সন্তানকে হারিয়ে শোকাহত মা

মায়ের হাত ধরে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিল মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তাসলিম আলম তিশা। কিন্তু কে জানত সে আর ঘরে ফিরতে পারবে না। পথেই তাকে না ফেরার দেশে পাড়ি জমাতে হবে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাজীপাড়ায় লাইফ এইড হাসপাতালের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় প্রাণ দিতে হলো ১২ বছর বয়সী তিশাকে। মায়ের সামনে পড়ে থাকে সন্তানের লাশ। ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে স্থানীয়রা। তেঁতুলিয়া পরিবহন নামে ঘাতক বাসটিকে আটক করে আগুন দেওয়া হয়। অবরোধ করা হয় রাস্তা। স্থানীয়দের সঙ্গে জড়ো হয় স্কুলের সহপাঠীরা। উভয়পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয় মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও রাস্তায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ করা হলে কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে এবং পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুরো এলাকা অচল হয়ে পড়ে। বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা। ট্রাফিক পশ্চিম পুলিশ পল্লবী জোনের সিনিয়র এসি সাইকা পাশা জানান, রাস্তা পার হওয়ার সময় তেঁতুলিয়া পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় তিশার মৃত্যু হয়। বাসটি মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও যাচ্ছিল। এ ঘটনায় রাস্তার দুই পাশেই যানজট সৃষ্টি হয়। পরে গাড়িটি রাস্তা থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। কাফরুল থানার এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় তেঁতুলিয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৭৩৭০) বাসটি এবং এর চালক আবদুর রহিম ওরফে বাবুকে আটক করা হয়েছে। এদিকে স্কুল ছুটি শেষে মা-ভাইয়ের সঙ্গে দুপুরে খাওয়ার কথা ছিল তিশার। কিন্তু বাসায় ফেরার পথেই বেপরোয়া বাস কেড়ে নিল তার জীবন। মায়ের সামনে সন্তানের এমন মৃত্যু কোনো ভাবেই মানতে পারছেন না স্বজনরা। তিশার নিথর দেহ যখন অ্যাম্বুলেন্সে থানায় নেওয়া হয় তখন মা রিমা আক্তার বার বার মূর্ছা যান। জ্ঞান ফিরেই চিৎকার করে বলছিলেন, আমার তিশা, তুই কই গেলি? আল্লাহ, তুমি আমার তিশাকে ফিরিয়ে দাও। তিশার মায়ের বিলাপ দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি কেউ। জানা গেছে, নিহত ছাত্রীর বাবা খোরশেদ আলম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিশার বাবার সহকর্মী মোহন সরকার বলেন, তার সামনেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। তিশাকে ছোটবেলা থেকেই তিনি চেনেন। বেলা ১টার দিকে স্কুল ছুটির পর একটি রিকশায় করে পূর্ব কাজীপাড়ার আল হেলাল হাসপাতালের কাছের বাসায় ফিরছিল তিশার মা, তিশা আর ছোট ভাই। রিকশাটি লাইফ এইড হাসপাতালের সামনে থামে। সেখান থেকে সড়ক বিভাজক পার হওয়ার জন্য এগিয়ে যায় তারা। মা ছেলের হাত ধরেছিলেন। মেয়ে পাশেই ছিল। মা ছেলেকে নিয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর উঠে যান। মেয়ে উঠতে পারেনি। মুহূর্তের মধ্যেই একটি দ্রুতগতির বাস মেয়েটিকে চাপা দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তিশার মৃত্যু হয়। মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক ওসমান গণি বলেন, তিশা খুব মেধাবী ছিল। তার এই অকাল মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না। এই রুটে বাসগুলো খুব বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। ঘাতক চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর