বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

এরশাদের বিকল্প নেই রংপুর সদর আসনে

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

এরশাদের বিকল্প নেই রংপুর সদর আসনে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রংপুর-৩ (সদর) আসনে প্রচারণা শুরু করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার পক্ষে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা জনসংযোগ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে ভোট করলে এ আসনটি আবারও এরশাদকে ছেড়ে দিতে হতে পারে। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে আসনটি এরশাদকে ছেড়ে দিয়েছিল মহাজোট। এরশাদ এ আসনে চারবারের সংসদ সদস্য। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে তার ভাই দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানকে পরাজিত করেন। ষষ্ঠ থেকে দশম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়া অন্য দলের কেউ বিজয়ী হতে পারেননি এ আসনে। ফলে আসনটিতে এরশাদ বা জাতীয় পার্টির বিকল্প নেই। এরশাদের সঙ্গে লড়াই করে জেতার মতো শক্তিশালী প্রার্থী আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে নেই বলেই মনে করেন স্থানীয়রা। দশম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে দলের সিদ্ধান্তে তিনি তা প্রত্যাহার করে নেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে ১৪ দল এককভাবে ভোট করলে চৌধুরী খালেকুজ্জামান আবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন বলে আলোচনা আছে। তিনি রংপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন। জানতে চাইলে চৌধুরী খালেকুজ্জামান বলেন, ‘গত আট বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরে যে উন্নয়ন করেছেন, অতীতে কোনো সরকার তার সিকিভাগও করেনি। মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে নৌকা প্রতীকের জয় হবে। তবে মনোনয়ন না পেলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।’ তিনি ছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের জেলা সহসভাপতি সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুত্ফা ডালিয়া এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবির) পরিচালক আনোয়ারুল ইসলামও দৌড়ঝাঁপ করছেন। রংপুর সদর আসনে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে একবার বিএনপির প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর এ আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও আসতে পারেননি। আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ, মহানগর বিএনপি সভাপতি মোজাফফর হোসেন ও সহসভাপতি সামসুজ্জামান সামু এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলও প্রার্থী হতে পারেন বলে স্থানীয় নেতারা বলাবলি করছেন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জি এম কাদেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারান হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ বলেন, ‘দল নির্বাচনে অংশ নিলে মনোনয়ন চাইব। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করে বিজয়ী করার চেষ্টা করব।’ রংপুর সদর আসনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বা জাতীয় পার্টির সম্ভাবনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কারমাইকেল কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির রংপুর জেলা সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মিয়া বলেন, ‘সদর আসনে এরশাদের সঙ্গে লড়াই করার মতো নেতা অন্য কোনো দলে নেই। এ ছাড়া এরশাদের বাড়ি সদর আসনে হওয়ায় আঞ্চলিকতার টান এবং সহানুভূতির কারণেই ভোটাররা এরশাদ বা জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বার বার বিজয়ী করেন।’ তবে তিনি এও বলেন, ‘রংপুরকে এরশাদের শক্ত ঘাঁটি বলা হলেও তার জনপ্রিয়তা এখন ভাটার দিকে; যার প্রতিফলন দেখা গেছে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, আট উপজেলা, তিন পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও ৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। এতে দলের চরম ভরাডুবি হয়েছে।’ রংপুর মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মিজু মনে করেন, রংপুরে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা তলানিতে নেমেছে। ভোটাররা জাতীয় পার্টিকে তেমন মূল্যায়ন করছেন না। শুধু দলের চেয়ারম্যান হিসেবেই সদর আসনের সাধারণ ভোটাররা ভোট দেন বলেই এরশাদ জয়ী হন। তবে তাও কমতে শুরু করেছে। তবে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘এরশাদ মাটি ও মানুষের নেতা। তিনি সদর আসনে যত দিন নির্বাচন করবেন, তত দিন তাকে হারানোর শক্তি অন্য কোনো দলের নেই।’ সদর আসনে অন্যান্য দলের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জেলা কমিউনিস্ট পার্টির প্রবীণ নেতা শাহাদাত হোসেন, জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও সাবেক জেলা সভাপতি একরামুল হোসেন স্বপন, মহানগর জাসদের (আম্বিয়া-প্রধান) সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ, বাসদের জেলা সমন্বয়ক আবদুল কুদ্দুস, ইসলামী আন্দোলনের এ টি এম গোলাম মোস্তফা বাবু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী মাজিরুল ইসলাম ও জেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্যসচিব রেয়াজ উদ্দিন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর