বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বেহাল দশা মিটফোর্ড হাসপাতালের

মাহবুব মমতাজী

নানা সমস্যায় জর্জরিত পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল। দালালদের উৎপাত, জরাজীর্ণ ভবন, স্যুয়ারেজের লাইন ব্লক, চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটের মধ্যে চলছে এখানকার সেবা কার্যক্রম। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এসব সমাধান করা যাচ্ছে না। দালাল ও স্যুয়ারেজ সমস্যার বিষয়টি নিজেরা অনুভব করলেও কিছুই করা যাচ্ছে না।

হাসপাতালটির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিটফোর্ড হাসপাতালের ভবনগুলো পুরনো ও জরাজীর্ণ। সেখানকার টয়লেটসহ বিভিন্ন স্থানের স্যুয়ারেজ লাইনের পাইপগুলোও প্রাচীন। আর প্রতিটি লাইনের সংযোগ বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে। নানা কারণে সেই লাইনগুলোর পাইপ ফেটে গেছে। ভিতরে মাটি ঢুকে তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আবর্জনা নিষ্কাশন হতে পারছে না। রোগীরা বাথরুমে যেতে পারছে না। কারণ, সেখানকার পানি ও ময়লা উপচে এসে বিভিন্ন স্থানের ফ্লোরে ভাসে। এতে চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে রোগীদের। রেহাই নেই চিকিৎসক ও নার্সদেরও। 

রোগীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ লাইন ধরেও বহির্বিভাগের চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায় না। আর ওয়ার্ডগুলোর অবস্থাও বেশ খারাপ ও নোংরা। খাবারের মানও অত্যন্ত খারাপ।

রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য স্থান এই মিটফোর্ড হাসপাতাল। সেখানকার জরুরি বিভাগের রোগীদের ক্যাজুয়ালিটি ইউনিটে দীর্ঘদিন ধরে নেই কোনো আবাসিক সার্জন। ডা. আশরাফুন্নেসা নামে যিনি ছিলেন তিনিও কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে বেহাল দুর্দশায় চলছে ক্যাজুয়ালিটির চিকিৎসা। দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার পরও সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে রোগীরা চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। এ সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছে দালালরা। রোগীদের ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আশপাশের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের সড়কটি পার হলেই পাওয়া যাবে বেসরকারি হাসপাতাল ডক্টরস ক্লিনিক, মেডি লাইফ, ইস্টার্ন, বাঁধন, আল-আরাফাত ও মুন লাইট ক্লিনিক। এসব হাসপাতাল মালিকদের মদদেই চলে দালালদের দৌরাত্ম্য। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে দালালি করে রোগী বাগিয়ে নেওয়ার সময় আনসারদের হাতে ধরা পড়ে আবদুল করিম (৪০) নামে এক ভুয়া চিকিৎসক। এ সময় তার কাছে থাকা তিনটি আইডি কার্ড, মিটফোর্ড হাসপাতালের একটি সিল-প্যাড, দুটি মোবাইল ও একটি রেকর্ডার, জনতা ও পূবালী ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট কার্ড, প্যাথলজি পরীক্ষার একটি বই এবং ভিজিটিং কার্ড রাখার দুটি বই জব্দ করা হয়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মূল ফটক দিয়ে ভিতরে রোগীদের প্রবেশের পরই শুরু হয় দালালদের তৎপরতা। চলে ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী বাগিয়ে নেওয়ার নানা কৌশল। এসব করা হয় নিরাপত্তা কর্মীদের কব্জা (কনভিন্স) করে। নিরাপত্তা কর্মীরা বিভিন্ন ক্লিনিকের কিছু দালাল এবং ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সপ্তাহ শেষে উপঢৌকন পান বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। বহির্বিভাগের সামনে দালাল চক্রের সদস্য মমতা, মরিয়ম, শেফালী ও নিলুফা আনাগোনা করে সবসময়। কেরানীগঞ্জ থেকে সোহরাব নামে এক ব্যক্তি আসেন বহির্বিভাগের চিকিৎসক দেখাতে। মাত্র ১০০ টাকায় দ্রুত সময়ে ভালো চিকিৎসককে দেখাতে পারবেন— এমন টোপ দিয়ে মরিয়ম নামে এক দালাল তাকে নিয়ে যান মিটফোর্ড রোডের বাবুল ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় বেসরকারি হাসপাতাল বাঁধনে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, নানা সমস্যার মধ্যে হাসপাতালের পুরনো অ্যাডওয়ার্ড ভবনটি মেরামতের জন্য ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। সেটির কাজ এখনো চলছে। আর কর্মচারী সংকটের কারণে পরিচ্ছন্নতার কাজকর্মও চালানো যাচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর