বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পৃথিবীতে এত জঘন্য অপরাধ হয়েছে কিনা জানা নেই : রিয়াজুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

পৃথিবীতে এত জঘন্য অপরাধ হয়েছে কিনা জানা নেই : রিয়াজুল

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, ‘মিয়ানমার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় যেভাবে রাখাইন রাজ্যে শিশু ও নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছে তা অমানবিক। পৃথিবীতে এত জঘন্য অপরাধ হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। শিশু ও নারীদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ রূপ এখন মিয়ানমারে দেখা যাচ্ছে। তবে এর ভিতরে একটি বড় ভিকটিম হলো শিশুরা। মিয়ানমারের শিশু ও নারীরা বাংলাদেশে এসে রাস্তার পাশে ও পাহাড়ের চূড়ায় যেভাবে আশ্রয় নিয়েছে তা অত্যন্ত অমানবিক। আর এই নির্যাতনে সবচেয়ে বেশি শিশুরাই শিকার হচ্ছে।’ গতকাল দুপুরে তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্ক ফোর্সের (এনসিটিএফ) যৌথ সভায় উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে একটি চার বছরের শিশুর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, রাতের বেলায় তার বাড়িতে হানা দিয়ে সেনা সদস্যরা বাবা-মাকে গুলি করে হত্যা করেছে। শিশুটি পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে পালিয়ে বেঁচে যায়। তারপর ওই শিশুটি জনস্রোতের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়, জঙ্গল পার হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে আশ্রয় নিয়েছে। আর এমন চিত্র প্রায় সবারই।’ তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশেও আজ শিশু নির্যাতন বেড়ে গেছে। শুধু শিশু নির্যাতন নয়, করা হচ্ছে শিশুদের ধর্ষণ। আর এসব হচ্ছে মূল্যবোধের প্রচণ্ড অবক্ষয়ের কারণে। বেড়েছে সামাজিক অস্থিরতা। যার ফলে মানুষ আজ পাশবিক দিক দিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আর এর ভয়াবহতার শিকার ছোট ছোট শিশু। শুধু তাই নয়, চার বছরের শিশুকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এমনকি আড়াই বছরের শিশুকেও ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে। আমরা মনে করি যারা এই পাশবিক মানসিকতা ধারণ করছে বা লালন করছে এবং শিশুদের প্রতি এ ধরনের লোমহর্ষক নির্যাতন করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিচারের প্রতিটি স্তরে যেসব অ্যাকটর (চরিত্র) কাজ করছে, যেমন বিচারের তদন্ত থেকে শুরু করে মেডিকেল রিপোর্ট, কোর্টের আইনজীবী, সাক্ষী উপস্থাপন করাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে কর্মকর্তা-কর্মচারী যার যেমন দায়িত্ব আছে, তাকে সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে; যাতে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে যাওয়া যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে শিশু নির্যাতন বন্ধে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। শিশু, নারীসহ যেসব নির্যাতন এরা করছে তা বন্ধ করতে হবে।’ এই শিশুদের মিয়ানমারে বাবা-মার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে, যাদের বাবা-মা বেঁচে আছে তাদের কাছে এবং তাদের দেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের একটা বড় দায়িত্ব আছে। যদিও বাংলাদেশ ইতিমধ্যে অনেক দায়িত্ব পালন করেছে। তবে এখন যে সমস্যা আছে— এসব মানুষকে নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রত্যেক শিশুর খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব শিশুর চিকিৎসার প্রয়োজন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব শিশু এক কাপড়ে এসেছে তাদের বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। এই যে শিশুসহ মানুষগুলো এসেছে বিশেষ করে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থাও করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) মানবাধিকারের যে মিশন আসছে আমরা তাদের কাছে অনুরোধ করব এবং জাতিসংঘের একটি মিশন এসেছে তাদেরও বলব যেন এ ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা করে। আমরা ইতিমধ্যে জাতিসংঘে একটি চিঠিও দিয়েছি এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনকেও চিঠি দিয়েছি। এমনকি ইউএন চিফকেও চিঠি দিয়েছি। শুধু তাই নয়, আশিয়ানের মেম্বার যারা রয়েছে তাদেরও চিঠি দিয়েছি। মিয়ানমার মানবাধিকার কমিশনকেও চিঠি দিয়েছি। আমরা বলেছি যত দূর সম্ভব শিশুদের প্রতি আর যেন নির্যাতন না হয় এবং যেসব শিশু এসেছে তাদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছি।’ যৌথ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিটিএফের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাফায়েত জামিল নওশান, চাইল্ড পার্লামেন্টের স্পিকার মেফতাহুন নাহার, সেভ দ্য চিলড্রেনের শেখ রহমতুল্লাহ রুমী, আবু জাফর মোহাম্মদ হোসাইন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ফারুক আলম খান, হোসনে কাদেরী মালা প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর