শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঘরের শত্রু বায়িং হাউস

বাণিজ্য বিরোধে পক্ষ নিচ্ছে বিদেশি ক্রেতাদের, আটকে দিচ্ছে রপ্তানি আয়

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ব্যবসা করছে এ দেশে। আয়-রোজগারও এই দেশ থেকেই। তারপরও যে কোনো ধরনের বাণিজ্যবিরোধে বায়িং হাউসগুলো বিদেশি ক্রেতাদের পক্ষ নিচ্ছে। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, অনেক ক্ষেত্রে এসব বায়িং হাউস তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় আটকে দিচ্ছে। এমন কি চুক্তি অনুযায়ী মূল্য পরিশোধেও ঝামেলা বাধাচ্ছে। বায়িং হাউসগুলোর এ ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ গেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সম্প্রতি এক চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বস্ত্র খাতে বাণিজ্যবিরোধে বায়িং হাউসগুলো সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে। এরা মূলত ক্রেতার পক্ষে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে রপ্তানি সম্প্রসারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার ফলে প্রাপ্য পরিশোধ না করাসহ চুক্তি মূল্য থেকে ছাড় দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এসব সমস্যা একদিকে রপ্তানিকারকদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে অন্যদিকে পণ্য রপ্তানির বিপরীতে প্রাপ্য বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। বায়িং হাউসগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা এ ধরনের অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা তাদের বিষয়ে যেভাবে অবহিত হয়েছি, সেটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এখন এ ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, বায়িং হাউস নিয়ন্ত্রণে দেশে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। এ ছাড়া বায়িং হাউসগুলোকে বিজিএমইএ’র সদস্যপদ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হলেও ‘সদস্য হতেই হবে’-এরকম বাধ্যবাধকতা নেই। এই সুযোগে তারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে।

রাজধানীর গুলশানের বায়িং হাউস এএমজেড টেক্সওয়ার্ল্ড লি.-এর চেয়ারম্যান আ ন ম মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, যেসব অভিযোগ উঠছে, তা শতভাগ সত্য। এর কারণ দেশের ৯০ শতাংশ বায়িং হাউস ব্যবসা এখন পরিচালনা করছে বিদেশিরা। এখানে যারা চাকরি করছে তারাও বিদেশি। ওরা ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে কাজ করে এ দেশে থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এসব বায়িং হাউস পরিচালনায় কোনো নীতিমালা নেই। ফলে চুক্তি ভঙ্গ করে পেমেন্ট আটকে দেওয়া, প্রতিশ্রুত অর্থ না দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, এক সময় চীন ও হংকং থেকে বায়িং হাউসগুলো ব্যবসা করত এ দেশে। এখন সব বড় বড় ব্র্যান্ডের লিয়াজোঁ অফিস রয়েছে ঢাকায়। খুব সহজে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এ ধরনের লিয়াজোঁ অফিস গড়ে তোলা যায়। এই সুযোগে বিদেশি বায়িং কোম্পানিগুলো জাঁকিয়ে বসেছে দেশে। ইপিবি জানায়, ২০১৫ সালের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বায়িং হাউসের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে সংশ্লিষ্ট বিধি সংশোধন করায় ট্রেড লাইসেন্স ও টিআইএন-ভ্যাট সনদ বাদে আর কোনো সুনির্দিষ্ট রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন পড়ে না। ব্যবসার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ অথবা সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া এখন অনেক সহজ। ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুর পর ভ্যাট সনদ গ্রহণের সুযোগ থাকায় ভ্যাট সনদ ছাড়াই বায়িং হাউসগুলোর ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ থেকে যায়। ফলে কোনো অভিযোগে বায়িং হাউসের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হলেও সেটি বাণিজ্যবিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কার্যকর সমাধান হিসেবে বিবেচিত হবে না বলে মনে করছে ইপিবি। সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বায়িং হাউসগুলোর বাণিজ্যিক কার্যক্রমে দায়বদ্ধতা থাকার প্রয়োজন রয়েছে। যে কোনো ধরনের একটা ফ্রেমওয়ার্কে তাদের থাকা উচিত। যিনি বায়িং হাউসের সঙ্গে চুক্তি করবেন, সেই চুক্তিতে অন্তত আইনিভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির (আরবিট্রেশন) বিষয়গুলো সংযুক্ত করতে হবে। এতে বাণিজ্যবিরোধ কিছুটা হলেও কমবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর