শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আগামীতেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে চান জাপা এমপিরা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এককভাবে লড়াই করতে চান। এ জন্য ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ) গঠন করেছেন। জোট নিয়ে সারা দেশে কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন। কিন্তু গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হওয়া জাতীয় পার্টির ভাগ্যবানরা আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকতে চান।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে ৩৪ আসন লাভ করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। এর ২১টিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এদের মধ্যে ১৮ জন নবাগত। পার্টির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এ নবাগতদের ভাগ্যচক্রে এমপি বা ‘আলাদিনের চেরাগধারী’ বলে থাকেন। ভাগ্যবান এমপিদের এখন বড় ভয়— আগামীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে না থাকলে এমপিত্ব বিসর্জন দিতে হতে পারে। জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের টার্গেট ইউএনএ-এর ব্যানারে ১৫১ আসনে জিতে সরকার গঠন করা। এ জন্য আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি। ১৫১ আসনে বিজয় সম্ভব কিনা জানতে চাইলে বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানের সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ সফর এবং জোট গঠনের ফলে পার্টির নেতা-কর্মীরা কতটা চাঙ্গা তা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে জোটের ব্যানারে সারা দেশে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আবারও জোট হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, দেশবাসী যা চাইবে, দলের নেতা-কর্মীরা যা চাইবে তা উপলব্ধি করে পার্টির চেয়ারম্যান সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্তটাই নেবেন। জাতীয় পার্টির প্রথমবার নির্বাচিত এমপিরা হলেন— শওকত চৌধুরী নীলফামারী-৪, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বগুড়া-২, নুরুল ইসলাম তালুকদার বগুড়া-৩, মো. নুরুল ইসলাম ওমর বগুড়া-৬, মুহম্মদ আলতাফ আলী বগুড়া-৭, মোহা. মামুনুর রশিদ জামালপুর-৪, সালাউদ্দিন আহমেদ ময়মনসিংহ-৫, এম এ হান্নান ময়মনসিংহ-৭, লিয়াকত হোসেন খোকা নারায়ণগঞ্জ-৩, এ কে এম সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫, পীর ফজলুর রহমান সুনামগঞ্জ-৪, মো. ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী সিলেট-২, সেলিম উদ্দিন সিলেট-৫, মোহাম্মদ আবদুল মুনিম চৌধুরী হবিগঞ্জ-১, মোহাম্মদ আমীর হোসেন কুমিল্লা-২, নুরুল ইসলাম মিলন কুমিল্লা-৮, মোহাম্মদ নোমান লক্ষ্মীপুর-২ এবং মোহাম্মদ ইলিয়াস কক্সবাজার-১। জানা যায়, ভাগ্যবান এমপিদের অনেকেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ছোটাছুটি করছেন। জাপার চেয়ারম্যান, শীর্ষ নেতাদের কাছে যেমন যাচ্ছেন, তেমনই আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছেও যাতায়াত করছেন। ইউএনএ জোটে থেকে নির্বাচনে কোনো ঝুঁকিই নিতে চাইছেন না তারা। ইউএনএ জোটের অধিকাংশ দল ও জোট নামসর্বস্ব হওয়ায় আস্থা সংকটে পড়েছেন জাপার প্রথম বারের মতো নির্বাচিত এমপিরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের তিন নবাগত এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউএনএ জোট নতুন সংকট সৃষ্টি করবে। আমরা মনে করি, জাপা চেয়ারম্যানের এটি একটি কৌশল। তারা বলেন, জাতীয় পার্টি যত বড় জোটই করুক, কারও কৃপা না পেলে একটি আসনও পাবে না। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতায় ৩৪ আসন পেয়েছে। এদের অধিকাংশ একক নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখে না; উপজেলা, ইউনিয়নেও নির্বাচন করার যোগ্যতা রাখে না। ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া এসব এমপি পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার নিশ্চয়তা পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরবে এটিই স্বাভাবিক। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে ইউএনএ জোটের ব্যানারে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার কাজ চলছে। তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। দেশ ও জণগণের বৃহত্তর স্বার্থে নির্বাচনে আগ মুহূর্তে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের নেতা আরও বৃহৎ কোনো দলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল বা জোটের সঙ্গেই আমাদের ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে আমি মনে করি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর