শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাছসহ প্রাণিজ পণ্য রপ্তানিতে দুর্ভোগ

সংকট উত্তরণে সরকারের ১৮ উদ্যোগ

রুহুল আমিন রাসেল

মাছ ও প্রাণিজ পণ্য রপ্তানিতে দুর্ভোগ কমছে না। নেই পণ্য বহুমুখীকরণ, পর্যাপ্ত ব্র্যান্ডিং ও বাজার অনুসন্ধান কার্যক্রম। এমনকি বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলো মাছ ও প্রাণিজ পণ্য বাজারজাতকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। এ পরিস্থিতিতে খাতের চলমান সংকট উত্তরণে ১৮টি উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মত্স্য ও প্রাণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের মাংস ও মাংসজাত পণ্যের ব্র্যান্ডিং করতে। এই কাজ করতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে দুবাইতে ভিসা জটিলতায় পড়ছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। আছে হয়রানিও। এর সঙ্গে গবাদি পশুর দাম দেশীয় বাজারে বৃদ্ধি পাওয়াতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে রপ্তানিতে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন— বিএফএফইএ জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধান কাঁচামাল কম এটাই প্রধান সমস্যা। কারও কন্টেইনার ফেরত এলে, তখন কাস্টমস জটিলতা তৈরি করে এবং আমদানি হিসেবে শুল্ককর আরোপ করে। ব্যবসায়ীরা বলেন, রপ্তানিতে এ ধরনের হয়রানি কাম্য নয়। তথ্য মতে, মত্স্য ও মত্স্যজাত পণ্য এবং মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যসহ কতিপয় অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি খাত নিয়ে সম্প্রতি পর্যালোচনামূলক সভা করেছে মত্স্য ও প্রাণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের সচিব মাকসুদুর হাসান খান স্বাক্ষরিত ওই সভার কার্যবিবরণীতে মাছ ও প্রাণিজ পণ্য রপ্তানিতে চলমান সংকট উত্তরণে ১৮টি উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়। ওই কার্যবিবরণীতে থাকা ১৮টি সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে— কন্টাক্ট ফার্মি ব্যবস্থা প্রবর্তন, মত্স্য ও মত্স্যজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে রিটার্ন কনটেইনার ছাড়করণের জটিলতা দূরীকরণ এবং বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসের মিশনগুলোর কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের মাধ্যমে পণ্যের বাজার অনুসন্ধান, মনিটরিং ও সম্প্রসারণের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। মাংস, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত এবং অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রণোদনা বা ভর্তুকি প্রদান। অংশীজনদের ঋণ ও নীতি সহায়তা প্রদান। অঞ্চলভিত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের নেওয়া ওই ১৮টি সিদ্ধান্তের মধ্যে আরও আছে— কৃত্রিম প্রজনন, জাত উন্নয়ন ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক যুগোপযোগী নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের উদ্যোগ। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসার কাজে দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা জটিলতা দূর করা। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পণ্যের গুণগতমান উন্নয়ন, ব্র্যান্ডিং, বাজার সম্প্রসারণ ও গবেষণার ক্ষেত্রে আরও মনোযোগী হওয়া এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। দেশে দুধ উৎপাদনে উৎসাহিত করতে আমদানি হওয়া পাউডার দুধের করহার বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ। গবাদি পশুর নাড়ি, ভুঁড়ি এবং ওমেজান স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রপ্তানিতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। গাভী পালনে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ সহায়তা প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রেও চালু করা। ওই সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে— মাছ ও প্রাণিজ সম্পদ উৎপাদনকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী এবং রপ্তানিকারকদের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ পর্যালোচনা করে সমাধান করা হবে। সমুদ্রে মত্স্য আহরণের নিষেধাজ্ঞার সময়ে যাতে মা-চিংড়ি আহরণে কোনো  অসুবিধা না হয়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে মত্স্য অধিদফতর। আগামী মৌসুমে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া সাপেক্ষে, তা রপ্তানির ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। উন্নতজাতের জীবাণুমুক্ত মাংসের জোগান নিশ্চিতকরণের স্বার্থে উন্নতজাতের গবাদি পশু আমদানি ও মাংস আমদানির আগে প্রক্রিয়াজাতক্রমে পুনঃরপ্তানির নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর