মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মণ্ডপে মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মণ্ডপে মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি

দিনাজপুরের পূজামণ্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর কলাবাগান মাঠে পুরোদমে চলছে পূজামণ্ডপ তৈরির প্রস্তুতি। চারদিকে হাঁকডাক আর কর্মব্যস্ততায় পরিষ্কার হয় দুর্গাপূজার কর্মযজ্ঞ। শুধু এই মণ্ডপ নয়, মিরপুর, পল্লবী, বনানী ধানমন্ডি, বাড্ডা, মতিঝিলসহ পুরো রাজধানীজুড়েই উৎসবের সাজে। চলছে বাহারি তোরণ নির্মাণ এবং আলোকসজ্জার কাজ। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ্যামল কুমার রায় বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশে গত বছরের তুলনায় এ বছর পূজার সংখ্যা বেশি। রাজধানীতে গত বছর পূজামণ্ডপ ছিল ২২৫টি। এ বছর ২৩১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আর সারা দেশে এ বছর মণ্ডপের সংখ্যা ৩০ হাজার ৭৭টি। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৬৮২টি নতুন মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। নর্থব্রুক হল রোড, লালবাগের শ্রী শ্রী রাধাবল্লভ জিউ বিগ্রহ মন্দির, শাঁখারীবাজার, প্যারিদাস রোড, চকবাজার, পাতলাখান লেনসহ ঢাকার প্রতিটি মহল্লার মণ্ডপের জন্য তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। পূজামণ্ডপের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি পুরান ঢাকায়। দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। জনবল অনুযায়ী প্রতিমার অর্ডার নিয়েছেন কারিগররা। কেউ ১০টি কেউ আবার ১৫টি প্রতিমার অর্ডার নিয়েছেন। দেড়-দুই মাস আগে থেকে কাজ শুরু করলেও ব্যস্ততার কমতি নেই প্রতিমা শিল্পীদের। প্রতিমার নকশা অনুযায়ী ১৫ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে অর্ডার নেওয়া হয়েছে।

অন্য বছরের মতো এ বছরও ঐতিহাসিক ভবন, বাদ্য যন্ত্র, বিখ্যাত মন্দিরের নকশার আদলে তৈরি করা হচ্ছে মণ্ডপ। সরেজমিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতরের শ্রী শ্রী কালীমন্দিরে দেখা যায় মণ্ডপের তোরণ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন শ্রমিকরা। বাঁশ-কাঠে পেরেক ঠুকে তৈরি করা হচ্ছে মণ্ডপের বাহিরের তোরণ। আর মন্দিরের ভিতরে চলছে প্রতিমা সজ্জার কাজ। প্রতিমা তৈরির মূল কাজ শেষ হয়ে গেছে এখন গহনা তৈরি আর রং করার বাকি। ধানমন্ডি-৩২ নম্বর খেলার মাঠ প্রাঙ্গণসহ রাজধানীর সব পূজামণ্ডপেই চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। পুলিশ প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ছয়টি মন্দির ও মণ্ডপে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, বনানী, কলাবাগান, বসুন্ধরা ও রমনা কালীমন্দির।

গাজীপুরে ব্যস্ত  প্রতিমা শিল্পীরা : মাটির প্রলেপে দক্ষ শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় ফুটে উঠেছে দেবী দুর্গার অবয়ব। পূজার আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। তাই রং, তুলিতে মনোযোগ শিল্পীদের। আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে পূজা মণ্ডপের সাজসজ্জা। দেবী দুর্গাকে বরণ করার প্রস্তুতিতে নিঃশ্বাস ফেলার ফুসরত নেই গাজীপুরের প্রতিমা শিল্পী এবং পূজা কমিটির সদস্যদের। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ৩০ সেপ্টেম্বর দশমী পূজা ও বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসব। এ উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে আনা হয়েছে প্রতিটি পূজামণ্ডপকে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলছে প্রতিমা তৈরি ও পূজার আয়োজন। প্রায় দুই মাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন করিগররা। মাটির কাজ প্রায় শেষ এখন শুধু রং করা বাকি। টঙ্গী বাজার এলাকায় শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, আমতলী সার্বজনীন হরিজর ঐক্য পরিষদ, সিলমুন, মরকুন, জয়দেবপুর বাজার এলাকায় কৃপাময়ী কালী মন্দির, গুরুলিয়া এলাকায় ননীবালা স্মৃতি মন্দির, পূবাইল, মিরের বাজারসহ ৫৭টি ওয়ার্ডে ৮৮টি পূজামণ্ডপ ও গাজীপুর জেলায় এবার ৩০১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিমা শিল্পীরা জানান, দুর্গা প্রতিমা তৈরি নকশা ভেদে ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ গাজীপুর মহানগর শাখার সভাপতি মানিক চন্দ্র দে বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা তৈরি ও বিভিন্ন প্রস্তুতির ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ষষ্ঠী পূজার আগেই আমাদের সব কাজ শেষ হবে। সিটি করপোরেশন টঙ্গী জোনের সভাপতি ৪৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন বলেন, আমার ওয়ার্ডে ৪টি পূজা মণ্ডপসহ নগরীর প্রতিটি এলাকায় দুর্গোৎসব পালনকালে এলাকাবাসী ও আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিটি পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান বলেন, প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অনুদান দেওয়া হবে। গাজীপুর-২ আসনের এমপি জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, গতবারের মতো এবারও যেন সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা পালিত হয় সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।

সর্বশেষ খবর