শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
শৃঙ্খলা ফিরছে ত্রাণে

ট্রলার ডুবে রোহিঙ্গা মৃত্যু ডাকাতিতে

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, কক্সবাজার থেকে

জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ধনাঢ্য রোহিঙ্গা পরিবারের শিশু ও নারীদের নাফ নদে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। লুটপাট ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে সংঘটিত লোমহর্ষ এই ঘটনায় পানিতে ডুবে অন্তত ১৫ জন রোহিঙ্গা নারী-শিশুর মৃত্যু ঘটে। ওই ঘটনায় নিখোঁজ হয় অন্তত ২৯ জন রোহিঙ্গা। সংঘবদ্ধ সশস্ত্র ডাকাতদল ধনাঢ্য রোহিঙ্গা পরিবারের অন্তত দুই কেজি স্বর্ণ ও কয়েক লাখ মিয়ানমার মুদ্রা লুট করে। ওই সময় বিজিবির কর্তব্যরত এক পাহারাদারকে ‘ম্যানেজ’ করে এইদিন রোহিঙ্গা বোঝাই বোট ডাকাতিতে নেমে পড়ে স্থানীয় ঈসমাইল মেম্বার, মোহাম্মদ সৈয়দ, জাবেদ, সাব্বির, জাবের, নুর হাসান, আমিনের নেতৃত্বে শাহপরীর দ্বীপ সাবরাংয়ের একদল সশস্ত্র ডাকাত। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরে তারা এর রহস্য উদঘাটন করে। তবে এখনই নাম প্রকাশ করছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সূত্র জানায়, রাতের আঁধারে চুপিসারে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানের খোঁজে বের হয় শাহপরীর দ্বীপ জাইল্যাপাড়ায় আগে থেকে অবস্থান নেওয়া মিয়ানমারের কয়েকটি ধনাঢ্য মুসলিম পরিবারের ৪৪ জন সদস্য। কথামতো ভাড়া বোট নিয়ে তারা জাইল্যাপাড়া থেকে সাবরাং নয়াপাড়ায় ফিরছিল। রোহিঙ্গা বোঝাই বোটটি নাফ নদের নয়াপাড়ার পাশের ঘাটের ৫ নম্বর স্লুইসের কাছে এসে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা বোটের ডাকাতদলটি সশস্ত্র হানা দেয়। তারা ধনী রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সর্বস্ব লুট করে ক্ষান্ত হয়নি। এরপর তারা রোহিঙ্গা বোঝাই বোটটি নাফ নদে ডুবিয়ে দেয়। এতে নাফ নদে ১৫ জন রোহিঙ্গা শিশু-নারীর সলিল সমাধি ঘটে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে ২৬ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, শিশু। সূত্র আরও জানায় ডাকাতিতে ব্যবহূত বোটটের মালিক সাবরাংয়ের আবদুল্লাহ প্রকাশ কালা আব্বা, মোহাম্মদ কাছিম প্রকাশ কালু। এ ঘটনার মূল হোতা ঈসমাইল মেম্বার আটক হলেও অন্যরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

ত্রাণে ফিরছে শৃঙ্খলা : রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোয় ত্রাণ বিতরণে ফিরছে শৃঙ্খলা। শুরুর দিকে সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী এলেও তা বরাদ্দের ক্ষেত্রে ছিল নানা অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা। প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে দূর-দূরান্ত থেকে দেশের বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষ নির্যাতিত-বুভুক্ষু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আসছে। উখিয়া থেকে টেকনাফের শেষ সীমানা শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ছুটে যাচ্ছে এসব ত্রাণবাহী ট্রাক ও অন্যান্য বাহন। কিন্তু কোনো ধরনের নিয়ম ও শৃঙ্খলা না থাকায় এত দিন সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছতে পারেনি। কেবল কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের ধারে বসে থাকা এবং কুতুপালং ও বালুখালীর আশ্রয় শিবিরের প্রথম দিকের তাঁবুগুলোর শরণার্থীরাই ত্রাণ ও অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে আসছিল। তবে দুই দিন ধরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে ত্রাণ বিতরণে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে। ত্রাণ বিতরণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে টেকনাফ ও উখিয়ার ১২টি পয়েন্ট। সেখানেই এখন ত্রাণবাহী সব ধরনের বাহন ছুটে যাচ্ছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১০ সেপ্টেম্বর থেকে সড়কে কোনো ত্রাণ দিতে দেওয়া হচ্ছে না। উখিয়ায় সাতটি ও টেকনাফের পাঁচটি পয়েন্টে গিয়েই ত্রাণ বিতরণ করার সুযোগ পাচ্ছেন আগ্রহীরা। এ ছাড়া কোথাও কোথাও শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর কয়েকটি তাঁবু নিয়ে করা হয়েছে একেকটি দল, যেখানে একজনকে মাঝি (দলনেতা) করে তার হাতেই ২০ থেকে ৩০ পরিবারের ত্রাণসামগ্রী তুলে দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে। এতে ত্রাণের কিছুটা সমবণ্টনও হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উখিয়া বাজারে প্রবেশের আগে প্রতিটি ত্রাণবাহী গাড়ির তালিকা তৈরি করে ত্রাণদাতাদের নির্ধারিত জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ত্রাণের পরিমাণ ও ধরন কী তা জেনে উপযুক্ত স্থানে যাওয়ার জন্য তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত তাদের রেকর্ডে ১০৭টি ত্রাণবাহী গাড়ি তালিকাভুক্ত হয়। গত আট দিনে এ সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান সেখানকার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। পথে পথে ত্রাণ বিতরণ বা নিজেদের ইচ্ছামতো জায়গায় গিয়ে ত্রাণ বিতরণের সুযোগ আর থাকছে না। নিয়মের বাইরে গিয়ে ত্রাণ দেওয়ায় ইতিমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মধ্য দিয়ে অনেককে জরিমানাও করা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই আরও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণ ও ত্রাণ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ফিরিয়ে আনা হবে।’

 

সর্বশেষ খবর