বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মহাসড়কে মহাযানজটের নেপথ্যে

• ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিনই যানজট • পাটুরিয়ায় পারের অপেক্ষায় দুই শতাধিক ট্রাক • শিমুলিয়া ঘাটে নাব্য সংকটে যানজট

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা, মো. কাবুল উদ্দিন খান, মানিকগঞ্জ ও লাবলু মোল্লা, মুন্সীগঞ্জ

মহাসড়কে মহাযানজটের নেপথ্যে

দেশের মহাসড়কগুলোতে টোল প্লাজা ও ফেরিঘাটের অব্যবস্থাপনায় যানজটের ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুটি সেতুর টোলপ্লাজা, পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের কাঞ্চন টোলপ্লাজা এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে প্রায় নিয়মিতই দুর্ভোগ হচ্ছে হাজার হাজার যাত্রীর। পণ্য পরিবহনের শত শত ট্রাক দিনের পর দিন আটকে থাকছে ফেরিঘাটগুলোতে। সরকারি ছুটির দিন এবং উৎসবকে সামনে রেখে এসব পয়েন্টে যানজটের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ১৭টি ফেরির মধ্যে ৩টি বিকল হয়ে পড়ায় প্রায় দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় আটকে রয়েছে। মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচলের ধীরগতিতে মহাসড়কে যানজটসহ যাত্রী দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজায় প্রতিদিনই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটে আটকে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয় শত শত যাত্রীর। ওজন মাপার যন্ত্রের ত্রুটির কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয় বলে জানান পরিবহন চালকরা। আবু মুসা নামের একজন বাসযাত্রী জানান, টোলপ্লাজায় ৬টি সারিতে যানবাহনের টোল আদায় করা হয়। সবগুলো সারিতে ওজন মাপার স্কেল রয়েছে। মালবাহী পরিবহনের ওজন মাপা নিয়ে সময় লাগায় যাত্রীবাহী পরিবহনকেও আটকা পড়তে হচ্ছে। এজন্য মালবাহী ও যাত্রীবাহী পরিবহনের আলাদা সারিতে টোল গ্রহণ করলে যাত্রী দুর্ভোগ কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কুমিল্লা রয়েল বাস সার্ভিস স্টাফ কামাল হোসেন জানান, ওজন মাপার স্কেলে ত্রুটি দেখা দিলে তাদেরও দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়তে হয়। এ বিষয়ে টোল গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজায় টোল গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএস কোম্পানির কর্মকর্তা আবদুস সালাম জানান, অনেক মালবাহী পরিবহনের চালকদের অসহযোগিতার কারণেও বেশি সময় লাগে। গতকালও একটি পরিবহন ৩৬ টন মাল নিয়ে এসে বলে ৫টন মালামাল এনেছে। সে স্কেলের ওপর দিয়ে যেতে রাজি নয়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে তার মালামাল ওজন করা হয়। আরও দুটি সারির কাজ শেষ হয়েছে, সেগুলো চালু হলে যাত্রী দুর্ভোগ কমবে বলে তিনি জানান। এদিকে স্কেলের ত্রুটির বিষয়ে বলেন, মাঝে মাঝে যান্ত্রিক ত্রুটি হলেও তা সারাতে লোকজন নিয়োজিত রয়েছে।

পাটুরিয়া ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাকের জট : পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটের ১৭টি ফেরির মধ্যে ৩টি ফেরি বিকল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ১৪টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার চলছে। ফলে গতকাল সোমবার পাটুরিয়া ঘাটে পারের অপেক্ষায় আটকে রয়েছে দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আটকে পড়া ট্রাক শ্রমিকদের। ঘাট নিয়ন্ত্রণকারী বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিনের পুরনো ফেরি নদীতে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত কিছু ফেরি বিকল হচ্ছে। আরার মেরামত করে সেগুলো বহরে যুক্ত করা হয়। ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঘাটে আটকে পড়ছে  দুই শতাধিক ট্রাক। তবে ঘাটে দীর্ঘক্ষণ কোনো যাত্রীবাহী বাস আটকে থাকছে না। বিআইডব্লিউটিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আজমল হোসেন  জানান, ১৭টি ফেরির মধ্যে ৩টি ফেরি বিকল রয়েছে। ১৪টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার চলছে। ঘাটে পণ্যবোঝাই ট্রাকের সংখ্যা বেড়েছে। বাসের চাপ বেশি নেই। খুব শিগগিরই ফেরিগুলো মেরামত হলে এই জট কেটে যাবে।

শিমুলিয়া ঘাটে নাব্য সংকট : পদ্মায় নাব্য সংকট তীব্র হওয়ায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি চলাচল ২০ দিনেও স্বাভাবিক হয়নি। এ কারণে মহাসড়কে যানজটসহ এই রুটের যাত্রীদের দুর্ভোগ হচ্ছে। পদ্মা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় এবং নদীর তলদেশে বালু ও পলি জমে যাওয়ায় প্রায়ই ফেরি আটকে যাচ্ছে মাঝ নদীতে। এতে একদিকে সময় বেশি লাগছে অন্যদিকে ফেরির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। নাব্য সংকট কাটাতে বিআইডব্লিউটিএর রোলেক্স জরিপ জাহাজ দিয়ে মনিটরিং সিস্টেমে ড্রেজিং করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের সিনো হাইড্রোর একটি শক্তিশালী ড্রেজারসহ মোট ৮টি ড্রেজার দিয়ে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টসহ পদ্মার ৮টি পয়েন্টে তলদেশের বালু অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে কবে নাগাদ চ্যানেলটি পুরোপুরি সচল করা যাবে তা জানা নেই বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের। যাত্রী পারাপারের জন্য ৮৭টি লঞ্চ ও তিন শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে এ নৌরুটে। ৩০ আগস্ট থেকে পদ্মার পানি ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকায় ফেরি চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। অচলাবস্থার কারণে লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার হচ্ছে বেশি। এসব তথ্য দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) গিয়াস উদ্দিন পাটোয়ারী জানান, প্রয়োজনের তুলনায় ফেরি কম চলাচল করায় বিপাকে পড়েছে দুই পারের চালক ও যাত্রীরা। ফেরি চলাচলে সময় বেশি লাগায় প্রতিনিয়ত ঘাটে অপেক্ষায় থাকে ছোট বড় ৩ থেকে ৪ শতাধিক যানবাহন। এ ছাড়া শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে পারাপারের অপেক্ষায় ৫ থেকে ৭ শতাধিক যানবাহন দেখা যায়। এর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। এতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির আই সি এস আই সুরজিৎ কুমার ঘোষ জানান, নাব্য সংকট ও তীব্র স্রোত থাকায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় প্রতিনিয়ত ঘাটে শত শত যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় থাকে। এ অবস্থা চলছে প্রায় ২০ দিন ধরে। ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এ সমস্যার সমাধান খুব শিগগিরই হবে।

সর্বশেষ খবর