বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে চায় না আওয়ামী লীগ

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে চায় না আওয়ামী লীগ

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে বিনা ভোটে সংসদ সদস্য হন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ পত্নী বেগম রওশন এরশাদ। মহাজোট ঠিক থাকলে আগামী নির্বাচনেও তিনি এই আসন হাত ছাড়া করতে চাইবেন না বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। আবার ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই থাকলেও তারা জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ নেতা ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, গোটা ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য উর্বর ভূমি। আর দলের মূল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় সদর থেকে। এখানে দলের সংসদ সদস্য থাকা সংগঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে সিদ্ধান্ত নেবেন শেখ হাসিনা। দলের প্রয়োজনে তার সব সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন রওশন এরশাদকে জাতীয় নেত্রী আখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি যে কোনো আসন থেকে দাঁড়ালেই পাস করবেন। অনেক গুরুত্বের বিবেচনায় আমরা সদর আসনটি চাই। দলীয় নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ চার নেতার মধ্যে তিন নেতাই সদর আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। আর কোন্দলে কাবু বিএনপি থেকে প্রায় হাফডজন নেতা মনোনয়ন চাইবেন। বাম দলগুলোও এখনো প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে না পারলেও দলের ভিতরে মনোনয়ন পেতে আওয়াজ তুলছেন।

গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। জোটের স্বার্থেই তাকে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদকে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের এখনো বছর দেড়েক বাকি থাকলেও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল হক, সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত। এ ছাড়া চরাঞ্চলের সাতটি ইউনিয়নকে নিজের ভোট ব্যাংক দেখিয়ে মনোনয়ন চাইবেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ। এ ছাড়া শিল্পপতি আমিনুল হক শামীমও মনোনয়ন চাইতে পারেন। দলীয় কোন্দলে টালমাটাল বিএনপিতে প্রায় ডজন খানেক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় নেতাদের পাশাপাশি যুগের পর যুগ নিষ্ক্রিয় থাকা নেতারাও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসন ছেড়ে সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন প্রার্থী হন জেলা সদর থেকে। কিন্তু অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের কাছে পরাজিত হন তিনি। আগামী নির্বাচনে তিনি মুক্তাগাছা থেকেই নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন। তবে দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন রয়েছেন সদরের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায়। আর নীরবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন ২০০১ এ বিএনপি থেকে এমপি হওয়া দেলোয়ার হোসেন খান দুলু। এক-এগারোতে সংস্কারপন্থির তকমা লাগায় দল থেকে তিনি অনেকটা ছিটকে গেলেও জেলার একাধিক শীর্ষ নেতা চাইছেন এই নেতা যেন ধানের শীষ প্রতীক পান। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্র নেতা আবু ওয়াহাব আকন্দও মনোনয়ন প্রত্যাশী। সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, কোতোয়ালি বিএনপির সভাপতি কামরুল ইসলাম মো. ওয়ালিদও বিএনপি মনোনয়ন রাজনীতিতে পিছিয়ে নেই। এ ছাড়া মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কাজী রানা। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ইতিমধ্যে নিজেদের ঘরোয়া মিটিংয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দলটির একাধিক সূত্র। একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা জাসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চুন্নু। ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে জেলা কমিটির সভাপতি তপন সাহা চৌধুরী, সিপিবি থেকে জেলা সভাপতি এমদাদুল হক মিল্লাত ও জেলা কমিটির সদস্য মনিরা বেগম অনু মনোনয়ন চাইবেন।

ইসলামী দলগুলোর খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ইসলামী ঐক্যজোট থেকে মাওলানা মুফতি শরীফুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন থেকে মাওলানা মুফতি মোশাররফ হোসেন, খেলাফত মজলিস থেকে মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, খেলাফত আন্দোলনের আজিজুল হক ও জমিয়তে ইসলাম বাংলাদেশ থেকে মুফতি মাহাবুবুল্লাহর নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর