বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
তিন পুত্র পুলিশ কন্যা শিক্ষিকা

সেই মায়ের দায়িত্ব নিল হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

সেই মায়ের দায়িত্ব নিল হাসপাতাল

দুজন সহকারী উপপরিদর্শকসহ তিন পুলিশ এবং এক শিক্ষিকার অসুস্থ বৃদ্ধা মা মনোয়ারা বেগমের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সমাজসেবা অধিদফতর। বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের অ্যাডভোকেট শেখ টিপু সুলতান এমপির নির্দেশে গত সোমবার থেকে অসহায় এই বৃদ্ধার চিকিৎসার যাবতীয় দায়ভার নেয় সরকারি দুই কর্তৃপক্ষ। ওইদিন বিকালে তাকে তার বাবুগঞ্জের খুপরি ঘর থেকে উদ্ধার করে শেরেবাংলা মেডিকেলে ভর্তি করেন এমপি টিপু সুলতান। গতকাল শেরেবাংলা হাসপাতালের ৪র্থ তলার অর্থপেডিক্স বিভাগের ১৩ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন কঙ্কালসার বৃদ্ধার খোঁজখবর নেন এমপি টিপু সুলতান। এ সময় তিনি তার সুচিকিৎসাসহ যাবতীয় বিষয় দেখভাল করার প্রতিশ্রুতি দেন। শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম সিরাজুল ইসলাম জানান, আশি বছর ঊর্ধ্ব মনোয়ারা বেগম বয়সজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। অনাহারের কারণে তিনি চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। তার একটি পা ভাঙা। এমপি সাহেবের নির্দেশে তার খাওয়া, চিকিৎসা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধসহ যাবতীয় বিষয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখভাল করছে। স্থানীয় এমপি টিপু সুলতানও তার জন্য বিভিন্ন উপকরণ কিনে দিয়েছেন। সমাজসেবা অধিদফতরও তার সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। ফেসবুকে ছবিসহ একটি পোস্ট দেখে চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে ঢাকায় অবস্থানরত এক যুবলীগ নেত্রীর অনুরোধে স্থানীয় এমপি টিপু সুলতান অসহায় বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের খোঁজখবর নেন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে ওই বৃদ্ধার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন। পরে তিনি সরেজমিন বাবুগঞ্জ স্টিল ব্রিজের পশ্বিম পাশে একটি খুপরি ঘরে অনাহারে-বিনাচিকিৎসায় দিনাতিপাত করা হতভাগী মনোয়ারা বেগমকে দেখতে যান। সোমবার এমপি তার নিজ দায়িত্বে নিজে উপস্থিত থেকে বৃদ্ধা মনোয়ারাকে তার বাড়ি থেকে শেরেবাংলা মেডিকেলে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। বাবুগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক জহিরুল অরুন জানান, মনোয়ারা বেগম বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের মৃত আইয়ুব আলী সরদারের স্ত্রী। ২০১৪ সালের পয়লা অক্টোবর আইয়ুব আলী মারা যান। তার ছয় সন্তানের মধ্যে এএসআই ফারুক হোসেন, এএসআই নেছার উদ্দিন, পুলিশ কনস্টেবল জসিম উদ্দিন, একমাত্র মেয়ে মরিয়ম সুলতানা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। অন্য দুই সন্তানের মধ্যে শাহাবউদ্দিন ব্যবসা এবং ছোট ছেলে গিয়াস উদ্দিন নিজের মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানরা তেমন খোঁজখবর না নেওয়ায় তিনি ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষিকা মেয়ে মরিয়ম তার সাধ্যমতো মাকে সাহায্য করেন। বাবার কাছ থেকে তিন পুলিশ ছেলে বাড়ির সব জমি লিখিয়ে নেওয়ায় স্বামীর মৃত্যুর পর মনোয়ারা তার ছোট ছেলেকে নিয়ে বাবুগঞ্জ স্টিল ব্রিজ এলাকায় নিজেদের এক টুকরা জমিতে খুপরি ঘরে বসবাস করছিলেন। সেখানে ছোট ছেলের আয়ে এবং নিজের ভিক্ষাবৃত্তিতে আয় হওয়া অর্থ দিয়েই তাদের কোনোমতে চলছিল। চার-পাঁচ মাস আগে পড়ে গিয়ে কোমড়ে ব্যথা পান বৃদ্ধা মনোয়ারা। এ খবর স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে স্থানীয় এমপি তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। গতকাল দুপুরে শেরেবাংলা মেডিকেলে গিয়ে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসায় নগদ ১০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেন জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মো. আজাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এমপি টিপু সুলান জানান, তিনি প্রথমে বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি তিন পুলিশ সদস্য ছেলে যারা মায়ের খোঁজখবর নেয় না, বা যারা জমি-সম্পদ থেকে তার মাকে বঞ্চিত করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছেন। মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান এমপি টিপু। এদিকে বৃদ্ধা মনোয়ারার বড় ছেলে এএসআই ফারুক জানান, তার ছোট ভাই গিয়াস পরিবারের সব সম্পদ একা আত্মসাৎ করার জন্য তার মাকে নিয়ে আলাদা থাকছে। তিনি সহ তার অন্যান্য ভাইয়েরা তার মাকে নিতে চাইলেও ছোট ভাই বাদ সাধছে। ভিক্ষা করা তার মায়ের অভ্যাস বলে কটাক্ষ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর