বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুর্ভোগের শেষ নেই বেহাল সড়কে

প্রতিদিন ডেস্ক

দুর্ভোগের শেষ নেই বেহাল সড়কে

বন্যায় ধসে যাওয়া কুড়িগ্রামের একটি সড়কের একাংশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের কয়েক জেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় সড়ক-মহাসড়ক ও চরাঞ্চলের কাঁচা রাস্তাগুলোর বেহালদশা হয়েছে। ভারি বর্ষণে সড়কগুলোর ইট-খোয়া-পাথর-বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে মৃত্যুঝুঁকি বেড়েছে। চরম দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

বগুড়া : বন্যা আর বৃষ্টিতে বগুড়া অঞ্চলের মহাসড়ক, সড়ক, বাইলেন, পাড়া মহল্লা এবং বন্যাকবলিত এলাকার চলাচলের সড়কের বেহালদশা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে গর্তের সৃষ্টি হয়ে ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে মৃত্যুঝুঁকি বেড়েছে। আর বন্যায় গ্রামীণ জনপদে সড়ক ভেঙে ধসে পড়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। বগুড়া সড়ক বিভাগ থেকে মহাসড়কের গর্ত সংস্কার করার উদ্যোগ নিলেও তা এখনো শেষ হয়নি। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বগুড়া পৌর এলাকার সড়ক, শহরের পাড়া-মহল্লা, উপজেলা পর্যায়ে চলাচলের সড়ক। জানা যায়, বগুড়ার শুরু সীমানা সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে শেষ  সীমানা গাইবান্ধার কাছে রহবল পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার। বর্ষণে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলো চলাচলের ক্ষেত্রে ভয়ানক হয়ে ওঠছে। মাঝে মাঝে গর্তগুলো হয়ে উঠছে মৃত্যু ফাঁদ। এই গর্তগুলো মেরামত করতে সড়ক ও জনপদ (সওজ)-এর রিপেয়ারিং (সিল) কার্যক্রম চালু থাকলেও সেগুলো টিকছে না। সংস্কারে একদিকে সরকারের বিপুল অর্থ অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টিতেই মহাসড়ক জুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে ছোট-বড় গর্তের। শাজাহানপুর, শেরপুর, মহাস্থানগড়, মোকামতলা, চণ্ডীহারা এলাকার মহসড়কের অসংখ্য স্থানে কার্পেট উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সে সব গর্তে পানি জমে গর্ত বড় হতে শুরু করেছে। এসব গর্ত বিপজ্জনক হয়ে মহাসড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়িয়েছে। মহাসড়কের পাশাপাশি শহরের পাড়া-মহল্লা, পৌর এলাকার এমনকি পায়ে হাঁটা রাস্তারও পিচ, পাথর উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টিতেই পানি জমে চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। বগুড়ার ধুনট উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও এলাঙ্গী ইউপি সূত্রে জানা যায়, ধুনট উপজেলা সদর থেকে সোনাহাটা পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক চলতি বর্ষায় খানা খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে সড়কের মাটি ধসে গেছে। ধসে যাওয়া স্থান দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বগুড়ার সোনাতলা সদর— সুজাইতপুর, কামারপাড়া সড়কে সেতুর সংযোগ সড়ক বন্যার পানির চাপে ধসে যায়। সড়কটি বাঁশ চাটাই দিয়ে চলাচলের উপযোগী করে রাখা হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসের একজন চালক শাজাহান মিয়া জানান, রংপুর থেকে বগুড়ামুখী সড়কের অসংখ্য স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলো সাধারণ যানবাহনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বগুড়া, রংপুর ও গাইবান্ধা সড়ক বিভাগের হিসাব মতে বগুড়া থেকে রংপুর মহাসড়কে নষ্ট হয়ে আছে প্রায় ৩৯ কিলোমিটার। এ ছাড়া বগুড়া থেকে সারিয়াকান্দি সড়ক ও সারিয়াকান্দি থেকে সোনাতলা সড়ক এবং বগুড়া থেকে ক্ষেতলাল সড়কের ১৯ কিলোমিটার বন্যা ও বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বগুড়া সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৯ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে বগুড়া থেকে রংপুর মহাসড়কের ৩৯ কিলোমিটার রাস্তা নষ্ট হয়ে আছে। কুড়িগ্রাম : সাম্প্রতিক বন্যায় কুড়িগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট ও ব্রিজ, কালভার্ট এখনো মেরামত না হওয়ায় দুর্ভোগ কমেনি মানুষের। দেখা গেছে, সড়কে কোথাও উঠে গেছে ইট, পাথর। দেখা যাচ্ছে অসংখ্য খানা-খন্দক। কোথাও ভেঙে খণ্ড খণ্ড হয়ে গেছে সড়ক। ভেসে গেছে পাকা সড়কের মাটিও। সেখানে গভীর গর্তে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ভেঙে গেছে বিভিন্ন কাঁচা-পাকা সড়ক। বন্যায় কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬২টি ইউনিয়নই বন্যাকবলিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়ক জনপথ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের ৪০ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ১৪০ কিলোমিটার কাচা সড়ক ও ২৩টি ব্রিজ-কালভার্ট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কটি। সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের পাটেশ্বরী পুরনো বাসস্ট্যান্ড ও কুড়ারপাড় এলাকায় এ সড়কের চারটি অংশে প্রায় ২০০ মিটার সড়ক সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত না হওয়ায় প্রায় চার সপ্তাহ ধরে কুড়িগ্রামসহ সারা দেশের সঙ্গে বন্ধ রয়েছে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলাসহ সোনাহাট স্থলবন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা। কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কটিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। সেখানেও খানাখন্দে ভরপুর। প্রায়শই যানবাহন বিকল হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী পাকা সড়কের ভেঙে যাওয়া চারটি অংশ এখনো মেরামত করা হয়নি। কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়কে যাতায়াতকারী নাখারগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা খালেদা বেগম লাকি, আবদুল ওয়াদুদ, আনোয়ারুল হক, আমিরুল ইসলামসহ একাধিক যাত্রী জানান, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের ভোগান্তিতে থাকলেও সড়কগুলোর ভাঙা অংশগুলো মেরামত করা হচ্ছে না। কুড়িগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বরকত মো. খুরশীদ আলম জানান, সড়কের চারটি অংশে প্রায় ২০০ মিটার সম্পূর্ণরূপে ধসে গেছে। এর মধ্যে ছোট দুটি ভাঙা অংশ ভরাট করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ : বর্ষণ-বন্যায় সিরাজগঞ্জের সড়ক-মহাসড়ক ও চরাঞ্চলের কাঁচা রাস্তাগুলোর বেহালদশা। ভারি বর্ষণে সড়কগুলোর ইট-খোয়া-পাথর-বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের হিসেবে ৪৬০ কিমি সড়কের মধ্যে ৩৫০ কিলিমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, বন্যায়-বর্ষণে স্থানীয় সরকার বিভাগের ৮০০ কিমি রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার জানান, জেলায় সওজ’র আওতায় প্রবল বর্ষণে ৩৫০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, এলজিইডির আওতাধীন ৮০০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দিনাজপুর : বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের ভাঙা স্থানগুলোতে বালুর বস্তা দিয়ে বা সাময়িকভাবে সংস্কার করে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের স্থানীয় পাকা সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। কাঁচা-পাকা রাস্তার বিটুমিন ও কাঁচা রাস্তা ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও অনেক স্থানে বন্যার পানি নিষ্কাশনে স্থানীয় লোকজন রাস্তা কেটে দেওয়ায় কোনো কোনো সড়ক ক্ষতি হয়। আবার পানির তোড়ে ড্রেন কালভার্ট ভেঙে গেছে না হয় ভেসে গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামত শেষে চালু হলেও বিরল রেলরুটে এখনো ট্রেন চালু হয়নি। চিরিরবন্দর-বলাইবাজার দিয়ে কুতুবডাঙ্গা, শিমুলতলী-আমতলী, ঘুঘুরাতলী-রানীরবন্দর, বেলতলী-বিন্যাকুড়ি পাকা রাস্তাগুলোর কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া কাঁচা রাস্তাগুলোর মাটি সরে গিয়ে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। দিনাজপুর পৌরসভার অনেক সড়কেরও একই অবস্থা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর