শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে বে টার্মিনাল করবে চীন

চুক্তির প্রস্তাব নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চট্টগ্রামে বে টার্মিনাল করবে চীন

চট্টগ্রামে প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। ‘চায়না মার্চেন্ট পোর্টস হোল্ডিং কোম্পানি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে এই আগ্রহ প্রকাশ করে। কোম্পানিটি বে-টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি ‘নন বাইন্ডিং এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’ (ইওআই) করারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চায়নিজ প্রতিষ্ঠানটি গত ৩১ আগস্ট এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই চিঠি পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে এই নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা। প্রস্তাবিত এই বে-টার্মিনাল নির্মাণে প্রায় ২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কথা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)। এ ছাড়া ভারত বাংলাদেশকে যে ঋণ (লাইন অব ক্রেডিট) সহায়তা দিয়েছে তার একটি অংশ এই টার্মিনালে ব্যয় করার প্রস্তাব রয়েছে। এ অবস্থায় আগ্রহ প্রকাশ করে চীনা কোম্পানিটি বলেছে, বিল্ট অপারেট ট্রান্সফার (বিওটি) পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় তারা। সূত্রগুলো জানায়, চায়নিজ কোম্পানিটি যে পদ্ধতিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে, সে অনুযায়ী টার্মিনাল নির্মাণের পর এটি পরিচালনার মূল দায়িত্বে থাকবে বাস্তবায়নকারী কোম্পানি। এখানে সরকারের কোনো সংশ্লেষ থাকবে না। সরকার এই টার্মিনালের ভোক্তা হিসেবে বিবেচিত হবে। বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলে নেওয়ার পর এর মালিকানা সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে বাস্তবায়নকারী কোম্পানি। চিঠিতে অবশ্য চবকের সঙ্গে যৌথভাবে টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনা করার কথা বলেছে চায়নিজ কোম্পানিটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবকের সদস্য (প্রকৌশলী) কমডোর জুলফিকার আজিজ, (ই) পিএসসি, বিএন, বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি এখনো চায়নিজ কোম্পানির চিঠিটি দেখিনি। তবে প্রস্তাবিত বে-টার্মিনালের সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) চলছে। জার্মানির প্রতিষ্ঠান এই কাজটি করছে। এটি শেষ হলে তারপর প্রকল্প বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, কারা সেখানে বিনিয়োগ করবে সেই বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে। জানা গেছে, প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল নির্মাণের বিস্তারিত কারিগরি, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত প্রভাব ইত্যাদি যাচাই করতে জার্মান প্রতিষ্ঠান শেলহর্ন নেতৃত্বাধীন যৌথ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে চবক। যৌথ প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো শেলহর্ন ইঞ্জিনিয়ার গেসেলকাফট এমবিএইচ, জার্মানি; এইচপিসি হামবুর্গ পোর্ট কনসাল্টিং জিএমবিএইচ, জার্মানি এবং কে এস কনসাল্টিং লিমিটেড, বাংলাদেশ। তারাই এখন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করছে। বন্দর সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর যে হারে চাপ বাড়ছে তাতে ২০১৯ সালের পর বন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামোতে অপারেশনাল কর্মকাণ্ড থমকে যাবে এমন পূর্বাভাস রয়েছে। আঙ্কটাড নীতিমালা অনুযায়ী, যে কোনো সমুদ্রবন্দরে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামোর অন্তত ৩০ শতাংশ জায়গা খালি রাখতে হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে ইতিমধ্যে সব ক্ষেত্রে ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে। এতে করে প্রায়ই জাহাজ জটের মুখে পড়ছে বন্দর। তাই আগামী ৭০/৮০ বছরের আমদানি-রপ্তানি প্রবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে বে-টার্মিনাল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল এরিয়ার আয়তন ৩৩৫ একর, অন্যদিকে পতেঙ্গায় প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল প্রকল্প স্থলের আয়তন তার তিনগুণের (৯০৭ একর) কাছাকাছি। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের খেজুরতলার বিপরীত থেকে কাট্টলী পর্যন্ত অংশে পলি জমে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চর সৃষ্টি হয়েছে। এই চর ও উপকূলের মাঝামাঝি ৮০০ মিটার প্রশস্ত জায়গায় জাহাজ চলাচলের পথ বা চ্যানেল তৈরি হয়ে আছে।

এর গভীরতা ৬ থেকে ৯ মিটার পর্যন্ত।

ড্রেজিং করে ১২ মিটার পর্যন্ত ড্রাফটের যে কোনো দৈর্ঘ্যের ৩০-৩৫টি জাহাজ একযোগে ভেড়ানো সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে যেখানে সর্বোচ্চ ১৮০০ টিইইউএস কনটেইনারবাহী ফিডার জাহাজ ভিড়তে পারে, বে-টার্মিনাল নির্মাণের পর সেখানে ৫ হাজার কনটেইনারবাহী আরও বড় জাহাজ ভিড়তে সক্ষম হবে। আবার খোলা পণ্যবাহী বড় জাহাজও ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে এখন সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের এবং ১৯০ মিটার পর্যন্ত লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারে। সেটাও জাহাজের আসা-যাওয়া জোয়ারের সময়ের ওপর নির্ভরশীল। বে-টার্মিনালে জোয়ার ও ভাটায় ২৪ ঘণ্টা সময়ই জাহাজ চলাচল, ভেড়ানো ও ঘোরানো সম্ভব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর